২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘৃণিত, কলঙ্কিত, রক্তাক্ত, নৃশংস ও ভয়াল একটি দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ।
সেদিন তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও পৈশাচিত এ হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। আহত হন অসংখ্য নেতা-কর্মী। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকচক্র ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলা চালিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। তখন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা বিদেশ থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে একবারে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। কিন্তু মহান আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে ঘাতকরা তাকে হত্যা করতে পারেনি। শেখ হাসিনা আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী। একটানা তৃতীয়বারের মতো তিনি দেশ চালিয়ে আসছেন। জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
২১ আগস্টের পৈশাচিত হামলাটি হয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময়। বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ক্ষমতার দাপট ছিল তার পুত্র তারেক রহমানের হাতে। মূলত তার নেতৃত্বে তৎকালীন সময় অধিক সমালোচিত ও বিতর্কিত হাওয়া ভবনে বসে তারেক রহমান জামায়াতসহ ঘাতকদের সাথে ষড়যন্ত্র করেন হামলা চালানোর। এই অপকর্মটি করানো হয়েছিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাররকে নিয়ে। তিনি জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে সব দায় তার ওপর চাপাতে চেয়েছিল। তখন এর দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়েও চাপানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতি জোট ক্ষমতা হারানোর পর দৃশ্যপট বদলে যায়। জজ মিয়া নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটে সত্য বেরিয়ে আসে।
২১ আগষ্ট হামলার পর পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করে। এটা ছিল লোক দেখানো মামলা। পরদিন আওয়ামী লীগ মামলা করতে গেলে মামলা নেয়া হয়নি। মামলা না দিয়ে উল্টো জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালায়। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় মামলাটি সচল হয়। তখন বেরিয়ে আসতে থাকে অনেক অজানা কাহিনি। ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডি দুইটি অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দীন, হুজিবি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।
ওই বছরই মামলা দুইটি দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। ওয়ান ইলেভেন সরকার আমলে হামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার পর মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়। এ নিয়ে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২। কিন্তু বিচারকালীন সময়ের মধ্যে জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের মানবতা বিরোধী অপরাধে এবং হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের অব্যহতি দেন ট্রাইবুনাল।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দেয়া রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ আসামিকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। এ ছাড়া ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী বাবর, পিন্টু বর্তমানে কারাগারে। অন্যদিকে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান কারিগর তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে পলাতক রয়েছেন। হারিছ চৌধুরীও বিদেশে, তবে কোন দেশে আছেন তা এখনও জানা যায়নি।
২০০৪ সালের এই গ্রেনেড হামলা নিঃসন্দেহে একটি পৈশাচিক ও বর্বরোচিত হামলা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্যই মূলত সেদিন এ হামলা চালানো হয়েছিল। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে যান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দৃঢ়চেতা, মেধাবী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অকুতোভয় সরকার প্রধান। মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সাহসের সঙ্গে পথ চলছেন। এ পর্যন্ত তার ওপর ২১ বার হত্যার জন্য হামলা চালানো হয়েছে। প্রতিবারই ঘাতকরা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আজ আমাদের মাঝে বেঁচে রয়েছেন। মহান আল্লাহপাক তাকে দীর্ঘায়ু করুন- এ কামনা আমাদের। একই সঙ্গে বলতে চাই- ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচারের রায় হয়েছে কিন্তু রায় কার্যকর হয়নি। আমরা আশা করবো আদালতের সব আইনি প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে রায় কার্যকর করা হোক। রায় কার্যকর করার মধ্যে দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে।