ভোগান্তির শিকার হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া শতাধিক নার্স। জানা গেছে, রাতযাপনের জন্য নির্ধারিত হোটেলে গিয়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর বাসায় ফিরতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফকিরাপুলের ওই হোটেলের গেইটের তালা খুললেও প্রায় তিন মাস বন্ধ হোটেলের কক্ষগুলো বসবাসের অনুপোযোগী হওয়ায় তাদের ফিরতে হয় বলে জানান এই নার্সরা।
আল হাসান ইন্টারন্যাশনাল নামের হোটেলটির মালিক এই ঘটনার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন।
মৌখিকভাবে হোটেল ভাড়া নেওয়ার কথা বলার পরে কোনো চুক্তি হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে পরে আর কোনো যোগাযোগও করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
অপরদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক রাখি বিশ্বাস বলেন, কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে সাময়িক সমস্যা হয়েছে।
এই হোটেল ঠিক করার বিষয়টি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ফোন করলে আজাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান জুয়েল।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে প্রায় সাড়ে সাতশ নার্স পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। একজন নার্স সাতদিন দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। পরে আরও ছয় দিন ছুটি কাটিয়ে আবার কাজে যোগ দেবেন। এই নার্সদের মধ্যে ১৫৮ জন নতুন নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের কিছু সংখ্যকসহ পুরোনো অনেকের থাকার জন্য এই হোটেল ভাড়া করেছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী নার্সরা জানান, শনিবার সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে শুক্রবার রাতেই তাদের হোটেলে চলে আসতে বলেছিলেন হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক।
তার নির্দেশ মতো সন্ধ্যা ৬টা থেকে তাদের অনেকে হোটেলের সামনে চলে আসেন। কিন্তু হোটেলের প্রধান ফট্ক খোলা হচ্ছিল না।
হোটেলের মালিক হারুনুর রশিদ বলেন, বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল থেকে হোটেল ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। হোটেল সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছিল। এরপর ঢাকা মেডিকেল থেকে আর কেউ যোগাযোগ করেনি। শুক্রবার সকালে হোটেল ব্যবস্থাপককে ফোন করে হোটেল ভাড়া নেওয়ার কথা জানানো হয়। হোটেল ব্যবস্থাপক তাকে একথা জানালে তিনি দুপুর ১২টার দিকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
‘কিন্তু তারা সারা দিন আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। কোনো চুক্তি হয়নি, কয়টি রুম ভাড়া নেবে, কতদিনের জন্য ভাড়া নেবে কিছুই বলেনি। হঠাৎ ৭টার দিকে আমার দারোয়ান ফোন করে বলে প্রায় একশজনের বেশি লোক হোটেলে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার হোটেল বন্ধ তিন মাস ধরে। সেখানে শুধু দারোয়ান থাকে, বাকি সবাই গ্রামের বাড়িতে। হঠাৎ করে আসলে আমি কীভাবে ব্যবস্থা করব? তারপরও হোটেল খুলে দিয়েছিলাম। বলেছি একদিন সময় দিলে সব ঠিকঠাক করে দেব। কিন্তু উনারা পরে চলে গেছেন।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক রাখি বিশ্বাস বলেন, এটা আমাদের ডিডি স্যারের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। ঢাকায় এখন হোটেল পাওয়াও কঠিন। চাইছিলাম ধারেকাছে কোনো হোটেলের ব্যবস্থা করতে। হোটেলের ডিল করতে করতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। এ কারণে মেয়েদের কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।