December 26, 2024, 3:23 pm

করোনার মত মহামারী ভবিষ্যতে বার বার ঘটতে পারে

Reporter Name
  • Update Time : Wednesday, June 10, 2020,
  • 114 Time View

অনলাইন ডেস্ক

কোথায় এবং কীভাবে নতুন রোগের বিস্তার ঘটে তা নিয়ে গবেষণা করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা একটি পদ্ধতি তৈরি করেছেন যাতে এসব রোগ বিস্তারে প্রক্রিয়ায় কী কী সাদৃশ্য দেখা যায় –তা চিহ্নিত করা সম্ভব, যাকে বলে প্যাটার্ন রিকগনিশন। এ পদ্ধতির ফলে পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব যে কোন কোন বন্যপ্রাণী মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটি মূলত ভবিষ্যতের যে কোনও রোগবিস্তারের জন্য প্রস্তুত থাকার যে বৈশ্বিক প্রয়াস তারই অংশ।

লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খ্যাতনামা অধ্যাপক ম্যাথিউ বেলিস। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি-কে তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছরে আমরা ছয়টি বড় বড় হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। সার্স, মার্স, ইবোলা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং সোয়াইন ফ্লু; এই পাঁচটি বুলেট আমরা এড়াতে পেরেছি। কিন্তু ছয় নম্বরটার হাত থেকে বাঁচতে পারিনি।’

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, এটাই যে শেষ মহামারি; এমন নয়। সেক্ষেত্রে বন্যপ্রাণী থেকে মানবদেহে আসা রোগগুলোর দিকে আরও গভীরভাবে নজর দিতে হবে।

এর অংশ হিসেবেই অধ্যাপক ম্যাথিউ বেলিস এবং তার সহযোগীরা এমন একটি প্যাটার্ন-রিকগনিশন পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যার সাহায্যে আমরা বন্যপ্রাণী থেকে আসা যত রোগের কথা জানি তার সবগুলোর উপাত্ত অনুসন্ধান করে দেখা যাবে। এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা হাজার হাজার ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট বা পরজীবী এবং ভাইরাস সম্পর্কে জেনেছেন। অধ্যাপক বেলিসের পদ্ধতি দিয়ে এই অণুজীবগুলো যেসব প্রজাতির প্রাণীকে সংক্রমিত করতে পারে- তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সূত্রগুলো চিহ্নিত করা যাবে। এই সূত্রগুলো দিয়ে আবার এটাও বোঝা যাবে যে, কোন কোন অণুজীব মানুষের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। যদি এভাবে কোন প্যাথোজেন, অর্থাৎ রোগ-সৃষ্টিকারী অণুজীব চিহ্নিত হয়– তাহলে বিজ্ঞানীরা কোনও রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটার আগেই তা ঠেকানোর উপায় উদ্ভাবনের গবেষণা চালাতে পারবেন।

অধ্যাপক বেলিস বলছেন, ঠিক কোন রোগ মহামারির চেহারা নিতে পারে তার গবেষণা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু আমরা এই প্রথম পদক্ষেপটির ব্যাপারে অগ্রগতি ঘটাতে পেরেছি।

বিজ্ঞানীরা একমত যে, বন ধ্বংস এবং বন্যপ্রাণীর আবাসভূমিতে মানুষের ঢুকে পড়ার ফলে এখন ঘন ঘন এবং সহজেই প্রাণী থেকে মানুষে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক কেট জোনস বলছেন, মানুষ যেভাবে ইকোসিস্টেমকে বদলে দিয়ে কৃষি বা বৃক্ষরোপণ করছে, তাতে জীববৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে এবং মানুষের নানা সংক্রমণে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ছে। অবশ্য সব রোগের ক্ষেত্রেই এমন হচ্ছে তা নয়।

অধ্যাপক কেট জোনস-এর ভাষায়, ‘কিছু বন্যপ্রাণী যারা মানুষের উৎপাতের ব্যাপারে সবচেয়ে সহিষ্ণু – যেমন কিছু প্রজাতির ইঁদুর – তারা অনেক সময় রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব ছড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। ফলে জীববৈচিত্র্য হারানোর ফলে এমন পরিবেশ তৈরি হচ্ছে যাতে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর ঝুঁকিপূর্ণ সংস্পর্শ বেড়ে যাচ্ছে। তাতে কিছু কিছু ভাইরাস, ব্যকটেরিয়া বা প্যারাসাইটের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।’

এ ক্ষেত্রে কিছু রোগ বিস্তারের কথা বলা যায় – যেখানে মানুষ এবং বন্যপ্রাণীর ‘মধ্যবর্তী পর্ব’ বা ইন্টারফেসের এই যে ঝুঁকি – তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

মালয়েশিয়ায় ১৯৯৯ সালে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। এটি একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যা এক ধরণের বাদুড়ের মধ্যে দিয়ে বাহিত হয়। এই সংক্রমণ ছড়িয়েছিল বনভূমির প্রান্তে থাকার একটি শূকরের খামারে। ফলের গাছে এসে জঙ্গলের বাদুড় ফল খেতো। তাদের আধা-খাওয়া ফল মাটিতে পড়লে তা খেতো শূকর। ওই ফলে লেগে থাকতো বাদুড়ের মুখের লালা – যা থেকে শূকরের দেহে সংক্রমণ হয়। এই সংক্রমিত শূকরের দেখাশোনা করতো খামারের ২৫০ জনেরও বেশি কর্মী। ফলে তাদের দেহেও দেখা দেয় ভাইরাস সংক্রমণ। তাদের মধ্যে শতাধিক কর্মীর মৃত্যু হয়।

কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃত্যুর হার সম্পর্কে এখনও গবেষণা চলছে। তবে অনুমান করা হয়, যত লোক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয় তার প্রায় এক শতাংশ মারা যায়। নিপাহ ভাইরাসের ক্ষেত্রে মারা যায় সংক্রমিতদের ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ।

লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় ও কেনিয়ার আন্তর্জাতিক গবাদিপশু গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক এরিক ফেভরে বলছেন, যেসব এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাবের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে সেসব জায়গায় গবেষকদের সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে।

বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এবং ফার্মের মতো স্থানে মানুষের কর্মকাণ্ড – এ দুয়ের মধ্যে যদি এ রকম কোনও ইন্টারফেসের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে সেটা হয়ে উঠতে পারে নতুন রোগ ছড়ানোর হটস্পট। যেমন বনভূমির কাছে একটি পশুপালনের ফার্ম বা যেসব বাজারে প্রাণী বেচাকেনা হয় – এগুলোই হচ্ছে এমন জায়গা, যেখানে মানুষ আর বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের পার্থক্য ঝাপসা হয়ে যায়। এগুলো থেকেই রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি।

অধ্যাপক ফেভরে বলেন, ‘আমাদের এ রকম ইন্টারফেস কোথাও তৈরি হচ্ছে কিনা তার ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে। অস্বাভাবিক কোনও কিছু দেখলেই তার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

মানব বসতি আছে এমন জায়গায় প্রতি বছর তিন থেকে চার বার নতুন রোগের উদ্ভব হয়। শুধু এশিয়া বা আফ্রিকা নয়, ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রেও এটা হচ্ছে।

অধ্যাপক বেলিস বলেন, ‘নতুন রোগের ব্যাপারে নজরদারির গুরুত্ব এখন আরও বেড়ে যাচ্ছে। আমরা এখন পৃথিবীতে মহামারি ছড়ানোর জন্য প্রায় আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে ফেলেছি।’

অধ্যাপক ফেভরেও এ ব্যাপারে একমত। তার কথা, করোনাভাইরাসের মতো ঘটনা আগামীতে বার বার ঘটতে পারে। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে যে, কীভাবে মানুষের কর্মকাণ্ড প্রাকৃতিক জগতের ওপর প্রভাব ফেলছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71