ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী এমপি ভারত-চীন সীমান্তে চীনা বাহিনীর অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘চীনারা হেঁটে হেঁটে ঢুকে লাদাখে আমাদের ভূখণ্ড দখল করে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী একেবারে নীরব। তিনি উধাও হয়ে গেছেন।’ গতকাল (বুধবার) রাহুল গান্ধী ওই মন্তব্য করেন।
গত মঙ্গলবারও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে রাহুল গান্ধী প্রশ্ন করেন, ‘লাদাখে চীনের আগ্রাসন হয়েছে কি না বলুন?’ এভাবেই একনাগাড়ে কয়েকদিন ধরে চীন নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন রাহুল গান্ধী।
এরপরে বিজেপি’র পক্ষ থেকে পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু হওয়ায় কার্যত চীন ইস্যুতে কংগ্রেস ও বিজেপি নেতাদের মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
রাহুলের প্রশ্নের জবাবে লাদাখের বিজেপি এমপি জাময়াঙ্গ সেরিং নামগিয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, কংগ্রেস আমলেই আকসাই চীন দখল করে বেইজিং। সেজন্য দেশকে বিভ্রান্ত করবেন না।
লাদাখের বিজেপি এমপি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে টার্গেট করে বলেন, চীন ভারতের এলাকা দখল করেছিল ঠিকই। কিন্তু সেটা কংগ্রেস আমলে, ১৯৬২ সালে। আকসাই চীন বা লাদাখের প্রায় ৩৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে চীন। ২০০৮-এর আগে চুমুরের পরের ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত টিয়া পাংনাক ও সাবজি ভ্যালি দখল করে। ২০০৮ সালে (কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন) ইউপিএ আমলে ডেমজোকের জোরাওয়ার ফোর্ট ভেঙে ২০১২ সালে সেখানে নজরদারি কেন্দ্র তৈরি করে।’ এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে ‘সব কিছু বলা যাবে না’ জানিয়ে তাঁর সাফাই, ‘ভারতের এক ইঞ্চি জমিও চীনের দখলে যাবে না।’
পাল্টা জবাবে কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি এমপি বলেছেন, বিজেপি দলীয় এমপির কাঁধে বন্দুক রেখে কংগ্রেসকে জবাব দিতে চাইলেও যাবতীয় তথ্যই মিথ্যা।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, ‘রাহুল গান্ধীর বোঝা উচিত, এরকম আন্তর্জাতিক বিষয়ে, যেখানে চীনের প্রশ্ন জড়িত, তা নিয়ে টুইটে প্রশ্ন তোলা যায় না।’ রাহুল বালাকোটে বিমানবাহিনীর অভিযানেরও প্রমাণ চেয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন রবিশঙ্কর প্রসাদ। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০২০ সালের ভারত ও ১৯৬২ সালেরর ভারত এক নয় বলেও রবিশঙ্কর প্রসাদ সাফাই দিয়েছেন।
কংগ্রেস মুখপাত্র মনিশ তিওয়ারি বলেছেন, ‘জাতীয়তা এবং ভারতীয়ত্বের উপরে বিজেপি এবং আরএসএসের একচেটিয়া অধিকার নেই। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব দেশের জমিতে যেকোনও দখল নিয়ে সরকারকে প্রশ্ন করা।’ তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী যিনি বিরোধীদের ‘লাল চোখ’ দেখিয়েছিলেন তাঁর উচিত ভারতের শত্রুদের দেখানো।
তিওয়ারির প্রশ্ন, ‘প্রধানমন্ত্রী কী বলবেন যে ৫ মে থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের কতটি অঞ্চল চীনা সেনাবাহিনীর দখলে আছে? উভয়পক্ষের সংলাপের পরে কোন এলাকা থেকে চীনের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হয়েছে? এলএসসি নিয়ে ভারতীয় ধারণা অনুসারে যদি প্রত্যাহার করা হয়, তবে তারা কী জায়গা খালি করেছে?’
কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে মনিশ তিওয়ারির আরও জিজ্ঞাসা, ১ এপ্রিল ২০২০-এর অবস্থা বহাল করার জন্য সরকার কী করছে? চীনা সেনার অনুপ্রবেশের জন্য কে দায়ী? সরকার কী এর দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছে?’
কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং ভারতীয় সীমান্তে চীনা সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশের বিষয়ে সংসদ অধিবেশন ডেকে ওই বিষয়ে আলোচনা করার দাবি জানিয়েছেন।
বিজেপি জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশকে অন্ধকারে রাখতে চায়। জাতীয় সুরক্ষা ইস্যুতে সরকারকে প্রশ্ন করা সবচেয়ে বড় দেশভক্তি এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেই বিষয়ে প্রত্যেক দেশবাসীর জানার অধিকার রয়েছে বলেও প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে।