December 24, 2024, 5:19 pm

বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত নীনা আহমেদ পেনসেলভেনিয়ার অডিটর জেনারেল নির্বাচিত

Reporter Name
  • Update Time : Friday, June 12, 2020,
  • 110 Time View

অনলাইন ডেস্ক

বহুল প্রত্যাশিত মার্কিন রাজনীতিতে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের উত্থানের ক্ষেত্রে ইতিহাস রচনা করলেন ড. নীনা আহমেদ। পেনসিলভেনিয়া স্টেট অডিটর জেনারেল পদে ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী মনোনয়নের নির্বাচনে (প্রাইমারি) নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিকে ৮০ হাজার ১৩৭ ভোটের ব্যবধানে ধরাশায়ী করেছেন ড. নীনা।

বোর্ড অব ইলেকশনের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ২ জুন অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের ৯৯% ভোট গণনার তথ্য অনুযায়ী ড. নীনা পেয়েছেন ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৬ ভোট। ৬ প্রার্থীর মধ্যে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পিটসবার্গ সিটি কম্পট্রোলার মাইকেল ল্যাম্ব পেয়েছেন ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৩৮৯ ভোট।

নির্বাচন কমিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে ড. নীনার নির্বাচন ক্যাম্পেইন টিমের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ড. ইবরুল চৌধুরী এবং আপার ডারবি সিটির কাউন্সিলম্যান শেখ সিদ্দিক বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে এ সংবাদদাতাকে জানান, মাইকেল ল্যাম্ব ফলাফল মেনে নিয়ে ড. নীনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অপর প্রার্থীরা ছিলেন পেনসিলভেনিয়া হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ এইচ স্কট কংক্লিন, সিপিএ রোজ ডেভিস, সিপিএ ট্র্যাসি ফাউন্টেইন, কমিউনিটি সংগঠক ক্রিস্টিনা হার্টম্যান।

উল্লেখ্য, ইউজিন ডিপ্যাস্কুয়ালে দুই টার্মে ৮ বছর দায়িত্ব পালনের পর আর নির্বাচনের সুযোগ না থাকায় অডিটর জেনারেলের পদটি শূন্য হয়েছে।

আরও উল্লেখ্য, এই আসনের দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে এ নির্বাচন হবার কথা ছিল ২৮ এপ্রিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে তা পিছিয়ে ২ জুন করা হয়। তবুও তাণ্ডব কমেনি। এজন্যে অনেক ভোটারই ডাকযোগে ব্যালট পাঠিয়েছেন। এজন্যেই রেজাল্ট পেতে ৮ দিন অপেক্ষা করতে হলো।

এমন বিজয়ে উৎফুল্ল ড. নীনা নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ এই স্টেটের বাংলাদেশীসহ সর্বস্তরের ভোটারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। করোনা মহামারি ও পুলিশী বর্বরতা-বিরোধী তীব্র গণআন্দোলনের মধ্যেও বিপুলভাবে এই বিজয় প্রদানের মধ্যদিয়ে পেনসিলভেনিয়ায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি তথা অভিবাসনের অধিকার ও মর্যাদা সুসংহত করার পথ সুগম করলেন। নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা।

ড. নীনা বিজয়ের অনুভূতি প্রকাশকালে উল্লেখ করেছেন, ‘আমার সাথে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী ৩ নারী এবং দুই পুরুষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারাও এই স্টেটের ইতিবাচক পরিবর্তনের স্লােগানে মাঠে ছিলেন।’

নীনা বলেন, ‘ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর উইমেন’র পরিচালনা পর্ষদের মেম্বার হিসেবে আমি বিশেষভাবে গৌরববোধ করছি যে, অনেক বেশী যোগ্যতাসম্পন্ন নারী গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। আমি আশা করছি সেটি অনেক ইঙ্গিতপূর্ণ নিকট ভবিষ্যতে জেগে উঠার ক্ষেত্রে। আমি ভোটারদের কাছে করা অঙ্গিকার থেকে বিন্দুমাত্র সরে দাঁড়াবো না। স্টেট প্রশাসনে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিবর্তনের ধারা সূচনা করবো। এমন একটি দুর্লভ সুযোগ দানের জন্যে নিজেকে ধন্য মনে করছি’।

পেনসিলভেনিয়া স্টেটে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যে ক’জন নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন তার অন্যতম হবেন ড. নীনা এবং এই স্টেটের ২৩৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একজন অশ্বেতাঙ্গ মুসলিম মহিলা এবং বাদামী রংয়ের বাংলাদেশি-আমেরিকান বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেন। বাংলাদেশের সন্তান ড. নীনা ২১ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া থেকে পিএইচডি করেন রসায়নে এবং মেডিকেল ফেলোশিপ করেছেন থমাস জেফারসন ইউনিভার্সিটি থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে।

সেই থেকেই তিনি পেনসিলভেনিয়া স্টেটের ফিলাডেলফিয়া সিটি সংলগ্ন মাউন্ট এয়ারিতে স্বামী আহসান নসরতউল্লাহ এবং দুই কন্যা প্রিয়া ও জয়াকে নিয়ে বসবাস করছেন। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে মাঠে রয়েছেন ৩২ বছরেরও অধিক সময়। এরফলে তৃণমূলে জোরদার একটি সম্পর্ক তৈরী হয়েছে ড. নীনার। এর আগে তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়া আমেরিকান বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ফিলাডেলফিয়া সিটির ডেপুটি মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে।

এসব কারণে পেনসিলভেনিয়ার মত বিশাল একটি স্টেটে তার ব্যাপক পরিচিতি ঘটেছে। বিশেষ করে এর আগের (২০১৮) নির্বাচনে এই স্টেটের লে. গভর্নর নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে ১৮৪ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। সেই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেই এবার অডিটর জেনারেল পদে দলীয় মনোনয়নের পথ সুগম হলো। দলীয় মনোনয়ন পাবার মধ্য দিয়েই ৩ নভেম্বরের মূল নির্বাচনে বিজয়ী হবেন ড. নীনা। কারণ, এটি হচ্ছে ডেমক্র্যাটদের এলাকা।

ড. নীনার এ বিজয়কে প্রবাসীরা অভিনন্দিত করেছেন। কারণ, স্টেটভিত্তিক কোন নির্বাচনে এর আগে আর কোন বাংলাদেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাননি। কংগ্রেসম্যান, স্টেট সিনেটর, স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ, সিটি কাউন্সিলম্যান পদে বাংলাদেশি আমেরিকানরা জয়ী হয়েছেন। এমনকি, প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টনের আমলে ড. ওসমান সিদ্দিক প্রথম মুসলমান রাষ্ট্রদূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।

ড. নীনার এ বিজয়কে স্বাগত এবং অভিনন্দন জানিয়েছেন তার নির্বাচনী টিমের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইবরুল চৌধুরী, খ্যাতনামা সমাজকর্মী ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. মনসুর খন্দকার এবং সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া, পিপলএনটেকের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিপ এবং প্রেসিডেন্ট ফারহানা হানিপ, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ এবং সেক্রেটারি মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার এবং সেক্রেটারি শহীদুল ইসলাম, আমেরিকা-বাংলাদেশ এলায়েন্সের প্রেসিডেন্ট এম এ সালাম, জর্জিয়া স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, নিউ হ্যামশায়ার স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল খান, হাডসন সিটির কাউন্সিলম্যান শেরশাহ মিজান, আপার ডারবি সিটির কাউন্সিলম্যান শেখ সিদ্দিক, মিলবোর্ন বরোর ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরুল হাসান, নিউইয়র্কের কমিউনিটি লিডার ফখরুল আলম, ফ্লোরিডাস্থ বাই-ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, উত্তর আমেরিকায় জালালাবাদ এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মঈনুল হক চৌধুরী হেলাল এবং সাবেক সেক্রেটারি জেড চৌধুরী জুয়েল, প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71