December 27, 2024, 6:46 am

কেন ইরানকে নিয়ে ইসরায়েল ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর ঘুম হারাম?

Reporter Name
  • Update Time : Sunday, June 14, 2020,
  • 74 Time View

অনলাইন ডেস্ক

ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত নিখুঁতকরণে ইরানে সত্যিই এক বিপ্লব ঘটে গেছে। এটা এখন স্বীকার করছেন বিশ্বের বড় বড় সামরিক বিশেষজ্ঞরা।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান শত্রুর নানা টার্গেট বা লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর নিখুঁতভাবে আঘাত হানার মত উন্নত মানের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হওয়ায় বিশ্বের অন্য যে কোনও দেশ ইরানে হামলা চালাতে দ্বিধাগ্রস্ত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক রাজকীয় গবেষণা সংস্থা রুসি (RUSI তথা Royal United Services Institute) বা আরইউএসআই-এর বিশেষজ্ঞরা।

ওই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছরের প্রথমদিকে ইরাকে (ইরানি জেনারেল সুলায়মানি হত্যার বদলা নিতে) মার্কিন বিমান-ঘাঁটিতে ইরানি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর অতি-নিখুঁত  হামলার ঘটনা ইরানের মধ্যে ক্রমেই এই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিচ্ছে যে তেহরান গোটা পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে সামরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করছে।

ইরান এইসব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্রের ভাণ্ডার গড়ে তুলে এটা নিশ্চিত করেছে যে অন্য দেশগুলো ইরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখতে বাধ্য হবে।

রুসি’র গবেষক ডক্টর জ্যাক ওয়াল্টিং বলেছেন, ‘নিখুঁত আঘাত হানার এই ক্ষমতার অর্থ হল ইরান তেল স্থাপনা বা সামরিক স্থাপনার ওপর মার্কিন সামরিক অভিযানের সমানুপাতিক পাল্টা বা অনুরূপ জবাব দিতে সক্ষম। আর এটা শাস্তির মাধ্যমে পূর্ব-প্রতিরোধের ধারণাকে করছে সীমিত।

এমনকি তেহরান তার প্রতিপক্ষগুলোর তুলনায় দুর্বল হয়ে থাকলেও তারা তেহরানের সঙ্গে লড়াই বাঁধানোর আগে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখবে।’

হামলা করলে বা যুদ্ধ বাঁধলে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ সদর-দফতরগুলো, পানি সুপেয় করার স্থাপনা, দূতাবাস ও সামরিক ঘাঁটিগুলোর মত নানা কেন্দ্র ইরানের এইসব গাইডেড-মিসাইলের টার্গেট হবে বলে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিযবুল্লাহর কাছেও নানা ধরনের বিপুল সংখ্যক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলে ব্রিটেনের এই সংস্থার বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।

তাদের মতে এর ফলে আয়রন ডোমের মত বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটি ও বিমান-বন্দরগুলো হিযবুল্লাহর আক্রমণে সুরক্ষিত থাকবে না।

হিযবুল্লাহর সাধারণ রকেটগুলোকেও উৎক্ষেপণের পর জিপিএসসহ বিশেষ প্রযুক্তির সুবাদে মাঝপথে গতিপথ বদলে দিয়ে নিখুঁত আঘাতকারী ক্ষেপণাস্ত্রে রূপান্তর করা হয়।  তাই অজ্ঞাত গতি-পথের কারণে সেগুলোকে বাধা দেওয়া আরও বেশি কঠিন বলে সামরিক বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।

তাদের মতে, কম সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের দরকার হচ্ছে বলে হিযবুল্লাহ তার ‘রাদ’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রিজার্ভেই রেখেছে যেগুলোর পাল্লা ৫০০ কিলোমিটার। ডক্টর ওয়াল্টিং বলেছেন, হিযবুল্লাহ এখন কেবল ইসরায়েলি শহরগুলোতেই নয় ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিগুলোতেও আঘাত হানতে সক্ষম এবং আয়রন ডোমের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায়ও সক্ষম।

ইরান যে গতিতে তার ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিকে উন্নত করে চলেছে তাতে তার শত্রুরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। ইরানের ড্রোনের অগ্রগতির চেয়েও এ বিষয়টি প্রতিপক্ষদের বেশি ভাবিয়ে তুলেছে বলে রুসির অন্য এক বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন।

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের অগ্রভাগগুলো বেশ বড় এবং সেগুলোকে বাধা দেওয়া বেশ কঠিন এবং বিষয়টি ইসরায়েলের জন্য ব্যাপক ও বড় ধরনের আতঙ্ক বলে জাস্টিন ব্রুংক নামের ওই বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন।

ইরান গত জানুয়ারি মাসে যখন ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তখন ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো খুব নিখুঁতভাবে মার্কিন ঘাঁটির বিশেষ কয়েকটি ভবনে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছিল।

ইরানের স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো খুব বিস্ময়কর মাত্রায় নিখুঁতভাবে আঘাত হানায় এমআইটির সামরিক বিশেষজ্ঞ ভিপিন নারাঙ্গ ‘ইকোনোমিস্ট’ পত্রিকাকে বলেছেন, ‘ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শিল্প নিখুঁতভাবে আঘাত হানার ক্ষমতায় যে বৈপ্লবিক অগ্রগতি অর্জন করেছে তা সত্য এবং এটা এখন কেবল মার্কিন মনোপলি বা একচেটিয়া ক্ষমতা নয়। আধুনিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এর রয়েছে ব্যাপক তাৎপর্য।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71