অনলাইন ডেস্ক
মহামারি করোনাভাইরাস বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। যত দিন যাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা তত বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। করোনার করাল থাবা কাউকে ছাড়ছে না। বৃদ্ধ, তরুণ, শিশু কেউ এ ভাইরাসের মারণ থাবা থেকে বাঁচতে পারছে না।
কিছুদিন আগেও মনে করা হচ্ছিল যে করোনাভাইরাসের কবল থেকে শিশুরা নিরাপদ। যথেষ্ট সাবধান না হলে বাচ্চারাও রেহাই পায় না এ মহামারি ভাইরাসের কবল থেকে।
চীনে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জন্মের মাত্র ৩০ ঘণ্টা পর এক নবজাতকের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর মুহূর্তেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
এ কারণে করোনার লক্ষণ দেখা প্রত্যেকেরই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের ‘কোভিড-১৯ ও টিকা দান: অভিভাবকদের যা জানা প্রয়োজন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে শিশুদের করোনার লক্ষণ দেখা দিলে কী করা উচিত তা তুলে ধরা হয়েছে।
ইউনিসেফ বলছে, আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশুরই খুব সামান্য লক্ষণ দেখা গেছে। এমনকি অনেকের ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। কিন্তু বয়স্ক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা অন্যদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ কারণে যদি আপনার শিশুর মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দেয় কিংবা সে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে আপনার মনে হয় তাহলে তাকে বাড়িতেই রাখুন। কিন্তু প্রয়োজনে তার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ গ্রহণ নিশ্চিত করুন।
যুক্তরাজ্য ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি হসপিটাল ইমারজেন্সি মেডিসিনে স্পেশালিটি ট্রেইনি ডা. রাইক রিদওয়ান একটি বেসরকারি অনলাইন পোর্টালে শিশুদের করোনা হলে কী করবেন সে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা আক্রান্তদের মধ্যে খুব কম রোগীই শিশু।
এদের মধ্যে ক্রিটিক্যাল রোগী একদমই কম। অনেকের কোনো উপসর্গই দেখা যাচ্ছে না; কিন্তু পরে অ্যান্টিবডি টেস্ট করে অনেক শিশুর করোনা পজিটিভ দেখা গেছে। সহজে বলা যায়, করোনা আগে হয়ে গেছে।
আর এর সঠিক কোনো কারণ জানা যাচ্ছে না। SARS-CoV2 ভাইরাস শরীরের ACE2 receptor দিয়ে ঢোকে। এ receptor শিশুদের মধ্যে কম থাকার কারণে হয়তো রোগটি বেশি সিরিয়াস হচ্ছে না।
তবে এটা শতভাগ প্রমাণিত নয়। বাচ্চাদের মধ্যে যাদের সিরিয়াস রোগ হচ্ছে, আইসিইউ লাগছে, তাদের মধ্যে যাদের ওবেসিটি (স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন) রয়েছে, তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
শিশুদের মধ্যে মারাত্মক দুটো বিষয় দেখা গেছে। প্রথমটার নাম জিবিএস (Guillain-Barre Syndrome) এটা যে কোনো ভাইরাস রোগের পরে হতে পারে। সুনির্দিষ্ট কোনও বয়স নেই যে শুধু প্রাপ্ত বয়স্কদেরই হবে বা ছোটদের হবে না তা নয়; তবে প্রাপ্তবয়স্ক ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এর হার বেশি।
এ ক্ষেত্রে যা হয় তা হলো হঠাৎ হাত ও পায়ে প্যারালাইসিস। ধীরে ধীরে প্যারালাইসিস বেড়ে বুক ও ফুসফুসের ক্ষমতাও কিছুদিনের জন্য চলে যেতে পারে। চিকিৎসায় ৯০ শতাংশ রোগী একদম সুস্থ হয়ে যায়; কিন্তু বাবা-মায়ের জন্য রোগটি ভয়ানক।
এটি করোনা থেকে হয় না, করোনা পার হওয়ার পর দেখা যায়। শিশুর হাত-পায়ের অনুভব করার শক্তি চলে গেলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
দ্বিতীয়টা অদ্ভুত প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আমাদের জানা দুটি রোগ- কাওয়াসাকি ডিজিজ ও টক্সিক শক সিন্ড্রমে কাছাকাছি একটা রোগ দেখা যায় করোনা পার হওয়ার এক মাস পর। ৫-৬ দিন জ্বর, সঙ্গে পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, চোখ লাল হয়ে আসা, ত্বকে ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা যায়।
এগুলো একইসঙ্গে দেখা গেলে শিশুকে ডাক্তার দেখাতে হবে। দ্রুত খারাপ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। একে বলা হচ্ছে Multi-System Inflammatory Syndrome in Children (MIS-C)।
অনেক সময় দেখা যায় শিশুর ঠান্ডা লেগেছে। নাক দিয়ে হালকা পানি পড়ছে। তখন অভিভাবকরা সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ খাওয়াচ্ছে। শিশুদের অকারণে ওষুধ না খাওয়ানোর ব্যাপারে যুক্তরাজ্য ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি হসপিটাল ইমারজেন্সি মেডিসিনে স্পেশালিটি ট্রেইনি ডা. রাইক রিদওয়ান বলেন, শিশুদের অকারণে ওষুধ খাওয়াবেন না।
তাদের নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক ভালো এবং করোনায় তাদের কিছুই হয় না। রিস্ক ওষুধ খাইয়ে কমানো যায় না। শিশুর ওজন যদি বেশি হয়, তা কমিয়ে আনার এটা একটা উপযুক্ত সময়।
তাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে এবং অতিরিক্ত রিচ ফুড থেকে দূরে নিয়ে আসতে হবে। কম বয়সে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা অনেক বেশি সহজ।
প্রাদুর্ভাব সংক্রান্ত সর্বশেষ গবেষণা যেটি আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে সেখানে প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল উহানের জিনইনতান হাসপাতালের রোগীদের বিষয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরই বয়স ৪০ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। মাত্র ১০ শতাংশ রোগী ৩৯ বছরের কম বয়সী।
গবেষকরা বলেন, শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের ঘটনা বিরল।
শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের এ নিম্নহার এর আগেও দেখা গেছে। সম্প্রতি ২০০৩ সালে চীনে সার্স ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় ৮০০ মানুষ মারা গেলেও তখনও শিশুদের সংক্রমণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কম ছিল।
২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল (সিডিসি) এর বিশেষজ্ঞরা ১৩৫ জন শিশু আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুঁজে পান। কিন্তু তখন শিশু ও কিশোরদের মধ্যে একজনও মারা যায়নি বলে জানান তারা।
মহামারি এ করোনাভাইরাসে অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিশুর কখনও নিজে নিজে হাত ধোয় না। তাকে মনে করিয়ে দিয়ে বার বার হাত ধুয়ে দিতে হবে।
খুব দরকার ছাড়া বাসা থেকে একদম শিশুকে বের করা যাবে না। আর এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা বাহির থেকে বাসায় এলে অবশ্যই গোসল করে ভালো করে হাত ধুয়ে শিশুকে স্পর্শ করতে হবে।