December 23, 2024, 1:55 am

করোনাকালীন মহাসংকটে দোল্লাই নবাবপুর ব্র্যাকের ভূয়সী প্রশংসা।

Reporter Name
  • Update Time : Monday, June 22, 2020,
  • 1184 Time View

আলিফ মাহমুদ কায়সার কুমিল্লা প্রতিনিধি ঃ
এনজিও ব্র্যাকের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সর্বহারা মানুষদের ত্রান ও পুনর্বাসন কার্যক্রম দিয়ে। সেই থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যেকোন দুর্যোগ মুহূর্তে সরকারের পাশাপাশি সর্বপ্রথম যে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে এসেছে তা হলো স্যার ফজলে হাসান আবেদ এর প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাক।

কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস প্রার্দুভাবে বিশ্ব যখন স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত মানুষের সেই বিপদের সময় সেই ক্লান্তি লগ্নে জনগনের পাশে আছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। গত ২২ মার্চ থেকে ব্র্যাক তার মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচীর আদায় কার্যক্রম বন্ধ রেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানা, সচেতনতা এবং বিভিন্ন সেবামুলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি দোল্লাই নবাবপুরের প্রত্যেকটি গ্রাম এবং পাড়া মহল্লায় মাইকিং করে জনগনকে সচেতন কারার পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্টিকার লাগানো, লিফলেট বিতরণ, হাট বাজার এবং রাস্তার মোড়ে হাত ধোয়ার জন্য সাবান পানির ব্যবস্থাকরণ, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন জনবহূল স্থানে সামাজিক দূরত্ব ম্যাপ অঙ্কন, ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন; স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসুচী, সামজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি, শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে অতি দরিদ্র পরিবারকে নগদে এবং বিকাশের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা প্রদানসহ নানাবিদ কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে।

করোনার ভয়ে সারা দেশের মানুষ যখন আতঙ্কিত তখন ব্র্যাকের কর্মীরা সাধারণ ছুটি এবং ঈদের ছুটিকে ওপেক্ষা করে, পরিবারের মায়া ত্যাগ করে যখন সদস্যদেরকে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন তখন অনেক সদস্য আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছেন। ব্র্যাক অফিস থেকে ফোন দিয়ে এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং করোনার লক্ষন প্রকাশ পেলে সরকারি হটলাইন নম্বর ৩৩৩ ও ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এনজিও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অনেক মানুষের নেতিবাচক ধারণা থাকলেও ব্র্যাকের এই সকল ব্যতিক্রমি উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
তাছাড়া দোল্লাই নবাবপুর ব্র্যাকের সদস্য আকলিমা বেগম,হালিমা আক্তার, সাজেদা,কাউসারসহ আরো একাধিক সদস্যরা জানান, করোনা কালীন সময়ে ব্র্যাকের স্যারেরা আমাদের কিস্তির জন্য কোনো প্রকার চাপ দিচ্ছেনা এমন কি এই বিপদে স্যারেরা সব সময় খোজখবর নিচ্ছে। এই দু:সময়ে ঋন পেয়ে এবং বিকাশে সঞ্চয় ফেরত পেয়ে আমরা ব্র্যাকের প্রতি কৃতজ্ঞ ও আমরা অনেক খুশি।
এ প্রসঙ্গে দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন মাস্টার বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সঠিকভাবে হাত ধোয়ার কৌশল এবং সামাজিক দূরত্ব বলতে কতটুকু দুরত্ব বজায় রাখতে হবে সেটা আমরা ব্র্যাকের মাধ্যমেই জেনেছি তাছাড়া করোনা মোকাবেলায় মাইকিং করা, লিফলেট বিতরণ, আর্থিক সহায়তা প্রদান করা থেকে শুরু করে সরকাররের পাশাপাশি ব্র্যাক সমান তালে সকল পর্যায়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে যা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।

অদ্য ১৮ জুন বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দোল্লাই নবাবপুর এলাকা অফিস পরিদর্শনকালে ঋণ নেওয়া শাহেরা বেগম ও নবির হোসেন জানান আমার স্বামী কাঁচামালের ব্যবসা করেন, করোনা ভাইরাসের কারনে প্রায় দুই মাস আমরা ঘর থেকে বের হতে পারিনি। ব্যবসা বন্ধ থাকায় কিস্তিও দিতে পারিনি। ব্র্যাক আমাকে ফোন দিয়ে হাতে টাকা পয়সা আছে কিনা এবং ঘরে খাবার আছে কিনা সে ব্যপারে খোঁজ খবর নিয়েছেন, ব্যবসা বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে খুব সমস্যায় ছিলাম তখন ব্র্যাক আমাকে বিকাশের মাধ্যমে সঞ্চয় ফেরত দিয়েছেন। স্বামীর ব্যবসার জন্য আজ আবার নতুন করে ঋণ নিতে এসেছি। বিপদের দিনে ব্র্যাক যা করেছে তা অনেক আপনজনেরাও করেন না।

কিস্তি আদায়ের ব্যাপারে কথা হলে এলাকা ব্যাবস্থাপক দাবি রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কিস্তি কালেকশন বন্ধ রেখেছি তবে গ্রামীন অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আমরা ঋণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি, সদস্যদের চাহিদা মোতাবেক বিকাশের মাধ্যমে সঞ্চয় ফেরত দিয়ে যাচ্ছি তবে যেসকল সদস্যদের আর্থিক অবস্থা ভালো এবং কিস্তি দিতে আগ্রহী তারা বিকাশের মাধ্যমে কিস্তি প্রদান করছেন। দেশের এই পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন তাই আমরা সদস্যদেরকে অফিসিয়াল বিকাশের মাধ্যমে লেনদেনে উৎসাহিত করছি। এ প্রসঙ্গে শাখা ব্যবস্থাপক বিসিইউপি নাসির উদ্দিন বলেন- আমরা সদস্যদের প্রয়োজনকেই বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছি, কিস্তি আদায় আমাদের মূখ্য বিষয় নয়, সদস্যরা আবার কিভাবে ঘুরে দাড়াতে পারবে সেটা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত তবে বিপদের দিনে মানুষের পাশে দাড়াতে পেরে আমরা গর্বিত।

কুমিল্লা-১ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক দাবি জোহরা কবির প্রপা ও আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রগতি আবু তাহের জানান, আমাদের অফিসে নিয়মিত জিবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে এবং সেবা নিতে আসা সদস্যদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, মাস্ক পরে এবং হাত ধুয়ে অফিসে প্রবেশ করানো হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব যাতে বিঘ্নিত না হয় সে ব্যপারে আমাদের কস্টমার সার্ভিস টিম যথেষ্ট সচেতনতা পালন করছেন।

শাখা ব্যবস্থাপক দাবি মোঃ আইয়ুব আলী এবং এলাকা ব্যবস্থাপক প্রগতি মোঃ আবুল খায়ের খাঁন বলেন, আমরা আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় ব্যবস্থাপক জনাব রাজেশ কুমার সাহা এবং মোঃ মারুফ হোসেনের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। করোনা ভাইরাসের কারনে অনেক মানুষ তাদের আয় রোজগারের পথ হারিয়ে ফেলেছেন, অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের মুলধন খেয়ে ফেলেছেন, এমতাবস্থায়, ঋণের বকেয়া থাকা সত্বেও কিভাবে নতুন করে রিফাইন্যান্স করে সদস্যদের আয় রোজগারের পথকে সচল রাখা যায় সে ব্যপারে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিচার বিশ্লেষণ করছেন। সুস্পষ্ট গাইডলাইন পেলে আমরা সে অনুযায়ী আমাদের কর্যক্রম আবার নতুন করে শুরু করবো ইনশাল্লাহ্।

তবে তারা জনগনকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন, স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারি সকল নির্দেশনা যথাযখভাবে পালন করার পরামর্শ দেন।
সকল কার্যক্রমের দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছেন ইষ্ট ডিভিশনের ডিভিশনাল ম্যানেজার(দাবি) রাজেশ কুমার সাহা ও মারুফ হোসেন (প্রগতি)।চলমান করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71