ফরহাদ জামান গালিব ৩৮তম বিসিএস কৃষি ক্যাডারে ২৬ তম স্থান অধিকারকারী। প্রথম বারেই বিসিএস হওয়ার পিছনে কী কৌশল অবলম্বন করেছিলেন । কীভাবে নিয়েছিলেন প্রস্তুতি? কোন বৈশিষ্ট্য তাঁকে দেশের লাখো বিসিএস পরীক্ষার্থীর তুলনায় এগিয়ে রাখল? তার সহজ পরামর্শ- পরিশ্রম করতে হলে সেটা সঠিক পদ্ধতিতে করতে হবে। কথা
হয় স্বপ্ন সফল করা ফরহাদ জামান গালিবের সাথে। তিনি বলেন, তাঁর সাফল্যগাঁথা ইতিহাস। জানান দিয়েছেন সঠিক লক্ষ্য আর কঠিন অধ্যাবসায় থাকলে পিছন ফিরে তাঁকাতে হয়না। অটুট মনবল আর জীবনের মূল ইচ্ছাকে লক্ষ্য করে সে পথে হাটলেই পাওয়া যাবে অফুরন্ত স্বপ্নের দ্বার। যে দ্বার তাঁকিয়ে থাকবে স্বপ্নবাজের অপেক্ষায়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মা-বাবা আর শিক্ষকদের অনুপ্রেরনা আমাকে আজ এই সাফল্যের চুড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম করেছে।
ছোটবেলা থেকেই প্রচুর পড়ুয়াঃ
প্রত্যন্ত অঞ্চল বসন্তপুরে পিতা, জনাব হুমায়ুন কবির ও মাতা শরীফুন নেছার কোল জুড়ে পৃথিবীর মুখ দেখেন ফরহাদ জামান গালিব । কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের মুন্সী বাড়িতে তার জন্ম। ছোট বেলা থেকেই পড়ুয়া ছাত্র ছিলেন। ফলে ভালো ছাত্র এরকম একটা তকমা গায়ে লেগে যায়। ২০০৯ সালে আবেদা নূর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে জিপিএ ৫.০০ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় সফলতার সাথে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোন। তিনি বলেন বাবার আার্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার দরুণ ভাল রেজাল্ট হওয়া সত্ত্বেও ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারেননি,পরবর্তীতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলমগীর কবির স্যারের সহযোগিতায় কুমিল্লার ইবনে তাইমিয়া কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন, এই কলেজ থেকে ২০১১ সালে জি.পি.এ ৫.০০ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের চৌকাঠ পেরোন। তারপর স্বপ্ন দেখেন বিসিএস ক্যাডার হবেন।
১ম বার আরো অধিক পরিশ্রম করে তিনি এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সব সময় মনে হতো এমন কিছু করবেন, যা তাকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাবে। মনের মধ্যে তার একটা জেদ সব সময় কাজ কারতো।
ছেলের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরহাদ রায়হান গালিবের পিতা হুমায়ুন কবির বলেন, আজ জীবনের শ্রেষ্ঠটি আমাকে উপহার দিয়েছেন আমার সন্তান। আমি গর্বিত এবং বিশ্বাস করি একজন ভালো মানুষ হয়ে এ দেশের সেবা করবে। আমার কষ্ট আজ স্বার্থক হয়েছে।
বিসিএস শুরুর গল্পঃ
বিসিএস পরীক্ষা কী, কেন, কীভাবে এই ব্যাপারগুলো সম্বন্ধে ৪র্থ বর্ষের পূর্বে তার কোন ধারনাই ছিল না। ৪র্থ বর্ষে উঠার পর দেখলেন সহপাঠীরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। কেউ বিসিএস দেবে, কেউ ব্যাংকার হবে। ফরহাদ জীবনে বিসিএস ক্যাডার হবেন এই সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। ২০১৬ সালের শেষের দিকে তার স্নাতক এবং ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হয় অনার্স শেষ করেই তিনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
অংশগ্রহণেই তিনি বাজিমাত করেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে। তারপর পরিশ্রমের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে লিখিত পরীক্ষার জন্য। কঠোর সাধনা, ত্যাগ ও তিতিক্ষার পর তিনি লিখিত পরীক্ষায় ও পাস করে ভাইবার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করেছিলেন। দীর্ঘ তিনটি বছর অতিবাহিত করার পর তিনি তার সফলতার মুখ দেখতে পান।
কৃতিত্বঃ
প্রথমেই কৃতিত্ব জানাই আমার শ্রদ্ধেয় পিতা ও মাতাকে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সহযোগিতা ও দোয়ার বরকতে আজকে আমার এই ছোট্ট সফলতা। কৃতিত্ব জানাই আমার বড় ভাইদের যারা আমাকে সাহস যুগিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি স্কুল ও কলেজের সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলীদেরকে যাদের দেখানো নির্দেশনা মোতাবেক আমি আমার শিক্ষা জীবন সাজিয়েছি।
কৌশলঃ
প্রথম বারেই বিসিএস হওয়ার পিছনে কী ধরণের কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল জানতে চেয়েছিলাম ফরহাদ জামানের কাছে। কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি? কোন বৈশিষ্ট্য তাঁকে দেশের লাখো বিসিএস পরীক্ষার্থীর তুলনায় এগিয়ে রাখল? তাঁর অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আগামী দিনগুলোতে যাঁরা বিসিএস পরীক্ষা দেবেন, তাঁদের জন্য পরামর্শ হিসেবে কাজ করবে। ফরহাদ যা বললেন:
* আমি মনে করি যেকোনো কাজ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য খুব ভালো পরিকল্পনা দরকার। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পরিকল্পনা আমি আগেই সাজিয়ে নিয়েছিলাম।
* এলোমেলোভাবে পরিশ্রম করলে সেটা কোনো কাজে আসে না। পরিশ্রম করতে হলে সেটা সঠিক পদ্ধতিতে করতে হবে। বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে কৌশলী হতে পারলে সেটা ভালো ফলাফলে সহায়ক হয়।
*পড়াশোনায় মন দেওয়ার জন্য আমি বন্ধুদের সঙ্গে অহেতুক আড্ডা বাদ দিয়েছিলাম। এটা হয়তো অন্যদেরও কাজে আসতে পারে।
*নিজেকে নিজে পুরস্কৃত করেছি। বড় কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ফেলেছি। তারপর ছোট ছোট কাজগুলোতে সফল হলে নিজেকে ছোট ছোট পুরস্কার দিয়েছি।
*অনেক বেশি মডেল টেস্ট দিয়েছি। এতে করে আমার দুর্বলতাগুলো জানতে পেরেছি। আত্মবিশ্বাসও একটু একটু করে বেড়েছে।
পরামর্শঃ
১. সর্বোপরি মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের মেধার বিকাশ ঘটাতে হবে ও সৃষ্টিকর্তার কাছে মনের আশা পূরণের দোয়া করতে হবে।
২. একমাত্র আমিই পারবো,এই বিশ্বাস মনে স্থির রাখতে হবে।
৩.পিতামাতার দোয়া সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। তাদের সাথে কখনোই বেয়াদবি করা যাবেনা।
৪. সবশেষে বিসিএস ক্যাডার হতে হলে আপনাকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।
ভালো থাকুন।।