December 23, 2024, 11:39 am

পাহাড়ে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব, হ্রাস পাচ্ছে জীব বৈচিত্র্য

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : Sunday, July 19, 2020,
  • 109 Time View

পাহাড় মানেই জীব বৈচিত্র্যের অন্যরকম এক রাজ্য। যেখানে থাকবে শুধুই জীব-জন্তু, পশু-পাখি। কিন্তু কালের বিবর্তনে পাহাড়ে যখন মানুষের বিচরণ ঘটলো, ঠিক তখনই বিলুপ্ত হতে শুরু হলো জীব বৈচিত্র। আর তখন থেকেই শুরু বৈচিত্র্যের সাথে মানুষের দ্বন্দ্ব।

বন উজার করা পশু-পাখি শিকারসহ মানুষের নানা রকম কর্মকাণ্ডে হ্রাস পেতে শুরু করেছে নানা প্রজাতির পশু, পাখি। বন দাপিয়ে বেড়ানো দানবাকার হাতিও মানুষের অত্যাচারে এখন ক্ষুদ্ধ।

প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হয় হাতির আক্রমণে মানুষের মৃত্যুর খবর আবার মানুষও হাতি হত্যা করে তাদের স্বার্থ হাছিলের জন্য। এভাবেই কখনো জীত হয় হাতির। আবার কখনো মানুষের। এভাবেই চলছে পাহাড়ের জীবন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলে প্রায় ৭৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১০০ প্রজাতির পাখি, ৭ প্রজাতির উভয়চর প্রাণী ও ২৫ প্রজাতির সরীসৃপের অবস্থান ছিল। কিন্তু বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ায় এই সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

বিশেষ করে মায়া হরিণ, সাম্বার, বানর, গয়াল, হাতি, বন্য শুকর, বন্য ছাগল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, লংগদু, কাপ্তাই, রাজস্থলী, কাউখালী, বরকল, নানিয়ারচর ও বিলাইছড়ি এলাকায় রয়েছে বন্যহাতির আবাসস্থল। তবে কত সংখ্যক হাতি রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই বন বিভাগের কাছে। এসব এলাকায় মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় ধ্বংসের পথে হাতির আবাস্থল।

বন উজারের কারণে খাদ্য সংকটে এসব হাতি। যার কারণে প্রায় সময় খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে হামলা চালায় তারা। ক্ষতি হয় ফসলের, ভাঙ্গচুর করে বসত বাড়ি আবার অনেক সময় হাতির আক্রমণে প্রাণও যায় অনেকের। আর হাতির এমন হামলায় অতিষ্ট হয়ে মানুষও বেছে নেয় ভিন্ন পথ। পেতে রাখে হাতির মরণ ফাঁদ। প্রতিবছর মানুষের পাতা ফাঁদে মারা যায় অসংখ্য হাতি।

আইইউসিএনের জরিপ বলছে, ২০০৯-২০১৯ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে রাঙামাটি ও বান্দরবানে বন্য হাতি মারা গেছে ২০টি। তার মধ্যে বান্দরবানের লামা বনবিভাগ এলাকায় ১০টি, পাল্পউড বন বিভাগ এলাকায় ২টি। এছাড়া রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের এলাকায় ৫টি ও উত্তর বন বিভাগের এলাকায় ৩টি।

আইইউসিএনের জরিপে আরও বলা হয়, হাতিদের মধ্যে দু’টি আলাদা শ্রেণী রয়েছে। একটি হলো আবাসিক। অন্যটি অনাবাসিক। আবাসিক হাতিগুলো বাংলাদেশে থাকে। আর অনাবাসিক হাতিগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং কিছু সময় অবস্থান করে আবার চলে যায়।

তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের হাতিগুলো বেশির ভাগ স্থায়ী। আইইউসিএন ২০১৫-১৬সালের জরিপে বাংলাদেশের ১২টি এলাকাকে হাতির করিডোর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

করিডোরগুলোর মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের অধীনে ৩টি, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের অধীনে ৫টি এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধীনে ৪টি।

গুরুত্বপূর্ণ এসব হাতির করিডোরগুলোতে বন উজার করে মানুষের বসতি নির্মাণ করায় হাতি হারাচ্ছে তাদের বাসস্থান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বন-বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই উপজেলা হচ্ছে হাতির গুরুত্বপূর্ণ করিডোর। এই এলাকায় প্রায় ৫৫টি হাতি রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই করিডোরগুলোতে মানুষ বর্তমানে পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করছে। একই সাথে বন উজারের কারণে খাবার সংকটে পড়ছে হাতি।

হাতি মানুষের সংঘর্ষের বড় কারণ হাতি চলাচলে মানুষের বসতি। তাই প্রায় সময় পাহাড়ে বন্যহাতির তাণ্ডবে মানুষের ফসল ও বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রন্ত হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মানুষের জন্য হাতির মৃত্যু হচ্ছে। এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে বন বিভাগ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71