আর কিছু দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে তাই জমে উঠেছে চান্দিনা উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাট। মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ উল আযহা। সর্বোচ্চ ত্যাগ তিতীক্ষার এ উৎসবে মুসলিম উম্মাহ পরম করুণাময় মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পশু কুরবানী করা হয়। চান্দিনার বিভিন্ন হাটে কুরবানী পশু ক্রয় বিক্রয় করতে দেখা গেলেও দোল্লাই নবাবপুর বাজারের মত এতটা জমজমাট দেখা যায়নি। শুক্রবার (২৪ জুলাই) উক্ত বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গরু-ছাগলের এ পশুর হাট টিতে উপচে পড়া ভিড়। গরু, ছাগলের সাথে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট এ হাটে পা ফেলা দুস্কর। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও সকাল থেকেই দূর-দূরন্ত থেকে গরু-ছাগল নেয়ে বিক্রেতারা হাটে আসতে শুরু করে। দুপুর থেকেই বৃহৎ এ হাটটি ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণা ও বেচাকেনাতে মুখরিত হয়ে ওঠে। ইতিপূর্বে এ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দর-কষাকষির চিত্র বেশি দেখা গেলেও শেষ হাটে তা দেখা যায়নি। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পশু কেনাবেচার চেষ্টা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই। ক্রেতারা দেখে-শুনে পছন্দের গরুটির দরদাম করছেন। পছন্দ হলে ন্যায্য দামে কিনে খুশি মনে কোরবানীর পশু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
হাটের চারপাশ ঘুরে দেখা যায়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিলো লক্ষণীয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিয়েছে হাট কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন। ফলে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গরু বিক্রেতা বলেন, ভারত থেকে গরু এবার আসে নাই তার পরে ও দাম অনেকটা কম। তারা আরো বলেন এবার গরুর দামও মোটামুটি ভালো পাওয়া যাচ্ছেনা । এদিকে, এলাকার খামারী বসন্তপুর গ্রামের কামাল মিয়ার সবচেয়ে বড় ১টি গরু দাম করা হয়েছে ২ লাখ ৫০হাজার টাকা তিনি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন। চান্দিনা দোল্লাই নবাবপুর হাটে আসা কেনু মিয়া ব্যাপারী জানান, তিনি প্রতি বছরের মত এবারো দোল্লাই নবাবপুর হাটে গরু এনেছেন। উক্ত হাটে এবার ভারতীয় গরু না আসলেও দেশী গরুতে জমজমাট ছিল পশুর হাট। তবে দাম একটু বেশি। তা হলেও কোরবানিতে দেশি গরু কিনতে আগ্রহ বেশী ক্রেতাদের। খামারিরা বলছেন, ভারতীয় গরু না আসার কারনে এ বছর তারা ভালো দামে গরু বিক্রি করতে পারছেন। তবে, ঈদকে ঘিরে গো-খাদ্যের দাম একটু বেড়ে গেছে। একারনে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
চান্দিনায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৯৫৮ খামারের গরু বিভিন্ন পশুর হাটে নিচ্ছেন বিক্রেতারা। ভালো দামও পাচ্ছেন। তবে গো-খাদ্যের দাম না কমালে লোকসানের আশঙ্কাও করছেন খামারিরা। এক্ষেত্রে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতীয় গরু-ছাগল না এলেও কোরবানির পশুর হাটে এর কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। চান্দিনায় ছোট-বড় স্থায়ী ও মিলিয়ে ১৮টি পশুর হাট রয়েছে। এর বাইরে ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী ৩টি ও ১৫টি অস্থায়ী হাট গড়ে উঠেছে। তবে অনেকের ধারনা বৃহত্তম পশুর হাট হচ্ছে দোল্লাই নবাবপুর পশুর হাট।তিনি বলেন স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তদারকির জন্য আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে সবসময় মনিটরিং করছি।’
তবে এ ক্ষেত্রে দোল্লাই নবাবপুর পশুর হাটের ইজারাদার কামরুজ্জামান মজুমদার টিপু জানান, দেশের এ হাটে স্থানীয় খামারিসহ ব্যাপারিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। আশা করছি এবারের কোরবানিতে পশুর কোনও সংকট হবে না।
উক্ত পশু হাটের সভাপতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন মাস্টার জানান, এ পশুর হাট সার্বক্ষণিক প্রশাসনের তদারকিতে চলছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় গরু না আসায় এ বছর দেশীয় খামারিরা অনেকটা লাভের মুখ দেখবেন। ভারত থেকে গরু না আসায় ক্রেতাদের একটু চড়া দামে পশু কিনতে হচ্ছে।অন্যদিকে খামারিরা গরু পালনে দ্বীগুন উৎসাহ পেয়েছে। খামারিরা জানায় ভারত থেকে গরু না আসলেও দেশী গরু উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটানো সম্ভব হবে। নিরাপত্তার ব্যাপারে থানা তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফয়সল জানান- ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে জালনোট চিহ্নিত করার যন্ত্র হাটে নিশ্চিত করা হয়েছে।।
এতে ক্রেতা ও বিক্রেতারা খুব খুশি।। এ ব্যাপারে চান্দিনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নেহাশীস দাস জানান- করোনাকালীন সময়ে হুমকির মধ্যে থাকা কোরবানীর বাজারে গরু নিয়ে আসার সড়ক পথে চাঁদাবাজি বা কোন রকমের হয়রানির অভিযোগ যেন না হয় সেদিকের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি রাখছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে মনিটরিং করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাটে গমন, অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়, মাস্ক পরিধানসহ সার্বিক বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।