এই মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু গেল এক দশকের বেশি সময় কখনো নিম্নমানের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহ করে কিংবা না করেই- হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। স্বাস্থ্য ঠিকাদারির ৯০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করতেন যোগসাজশ আর দোর্দন্ড প্রতাপে।
আত্মসাত করেছেন এবি ব্যাংকের দেড় হাজার কোটি টাকাও। বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করে তালিকাভুক্ত হয়েছেন বিশ্ব দুর্নীতি কেলেঙ্কারীর পানামা পেপার্সে। সময় খারাপ দেখে এখন উধাও হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
রংপুরের সাধারণ কন্ট্রাক্টর এসএসসি পাশ মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর। অবশ্য সাধারণ হিসেবে নয়, অসাধারণ সব অনাচারের সাথে সাথেই গড়ে উঠেছিল এই বিলাশী স্থাপনাটি।
দেশের স্বাস্থ্যখাতে টেন্ডারবাজির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক মিঠুর অবশ্য এ বাড়িতে বেশিদিন থাকা হয়নি। যে আলাদিনের চেরাগে তিনি দুর্নীতির কুমির হয়েছে সেটা তাকে বিদেশেই পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
এর আগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্ধী হাসপাতালে স্বাস্থ্য সরঞ্জামের অধিকাংশ সরবরাহ না করেই ভুয়া ভাউচারে ৪৫০ কোটি টাকা তুলেছে মিঠুর প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালে মুগধা হাসপাতালের সরঞ্জাম সরবরাহে ৩শ কোটি টাকা গরমিল হলে তার বিরুদ্ধে প্রথম তদন্ত শুরু করে দুদক। সিরাজগঞ্জ এম মনসুর আলী হাসপাতালে নিম্নমানের সরঞ্জাম কেনাকাটায় মিঠুর বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ তদন্ত করে দুদক। তবে ৩টি ঘটনাতেই পিছনে হেটেছে দুদক।
স্বাস্থ্যখাতের টেন্ডার বাগিয়ে নিতে মিঠু নামে বেনামে রয়েছে ডজন খানেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার নেতৃত্বে ছিল মূল প্রতিষ্ঠান লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও লেক্সিকোন টেকনোট্রেড লিমিটেড। হলেও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে বেনামে রয়েছে। মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেড, সিআর মাচের্ন্ডাইজ, এলআর এভিয়েশন, জিইএফ ট্রেডিং, মেহেরবা ইন্টারন্যাশনালসহ অনেক প্রতিষ্ঠান।
২০১১ সালের শ্যামলীর রিংরোডে অনুমোদন না নিয়েই গড়ে তোলেন ঢাকা সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ। বিনা অনুমতিতে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করার পর মামলার মুখে সেটি বন্ধ হয়।
২০১৫ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের দুর্নীতিতে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি আফজাল দম্পতি সম্পদের পাহাড় গড়ে আলোচনায় আসে। অর্থ পাচারকারী এই দম্পতি ছিল মিঠুরই শিষ্য।
মিঠু সম্পর্কে সবশেষ আলোচনা উঠে করোনাকালে কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের প্রয়াত পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল্লাহ মিঠুর দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে জনপ্রশাসন সচিবকে লেখা চিঠিতে।
স্বাস্থ্যখাতই নয় দুর্নীতিতে ছাড়েননি ব্যাংক খাতকেও। নিজে ও তার আত্নীয় স্বজনের নামে বিধিবহির্তভাবে দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ তুলে করেছেন আত্নসাত।
২০১৬ সালে বিশ্বে তোলপাড় করা অর্থ পাচারের পানামা পেপারস কেলেঙ্কারীতে বাংলাদেশীয় ২১ অর্থপাচারকারীর তালিকায় নামে উঠে আসে এই মিঠু ও তার ভাই মোকসেদুল ইসলামের। যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন বিপুল অর্থ। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও গড়েছেন বিত্ত বৈভব। তবে স্বাস্থ্যখাতে মিঠুদের নেপথ্যে যারা ছিলেন, যারা আছেন, থাকছেন.. ধরা ছোয়ার বাইরেই।