পটুয়াখালী এলজিইডি নিবার্হী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার হাওলাদার গ্রামীন জনপদ উন্নয়নের ৬০ কোটি টাকা ব্যায়ে শ্বশুর বাড়ীর পৌর এলাকায় ১৬টি ব্রীজ নিমার্নের দরপত্র আহবান করেছেন। প্রকল্পের নীতিমালা তোয়াক্কা না করে গ্রামীন জনপদের আইডি ব্যবহার করে ব্রীজেরস্থান দেখিয়েছেন সদর পৌরসভায়।শুধু তাইনয়,একশ্রেনীর অসাধু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে গোপন যোগাযোগে নির্মিত লোহার সেতুর দরপত্র আহবান করে লুটপাটের পায়তারা চলছে।
এলজিইডি’র অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রীজের স্থান, জরিপ, প্রাক্কলন তৈরী,সহ- প্রকল্প অনুমোদন ও দরপত্র আহবানের অনিয়ম ও দুনির্তীর বিষয়টি নিবার্হী প্রকৌশলী ও প্রকল্প কর্মকতা ছাড়া
সংশ্লিষ্টরা কিছুই জানেন না।সূত্রে আরো জানা যায়, দক্ষিনাঞ্চলীয় লোহার সেতু পুননিমার্ন/পুনবার্সন প্রকল্পের পি.ডি’র অর্থায়নে ইতি মধ্যে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭টি গাডার্র ব্রীজ নিমার্ন করছেন নীজ গ্রামে। অথচ তার নীজ উপজেলায় ২৩৯ টি লোহার সেতু যা আজ সম্পূর্ণ ঝুকিপুর্ণ অবস্থায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলায় সর্বমোট ১ হাজার ২০৭টি সেতু’র মধ্যে ৬ শতাধিক সেতু ঝুকিপুর্ণ ও ব্যবহার অনুযোগী হয়ে পড়ায় চরম দূভোর্গে রয়েছেন গোটা জেলার সাধারণ মানুষ।ক্ষমতার অপব্যবহারে অপ্রয়োজনীয় ব্রীজ নিমার্নে গ্রামীন জনপদের উন্নয়ন ব্যহত হয়ে জন দূভোর্গ লেগেই থাকবে। পক্ষান্তরে সরকারের টাকা অপচয় হবে বলেও অভিযোগ ঠিকাদার ও ভুক্তভোগীদের।
অনুসন্ধানে দেখাযায়, গত ২১ এপ্রিল পটুয়াখালী এলজিইডি নিবার্হী প্রকৌশলী স্বাক্ষরিত একাধিক নোটিশে দক্ষিনাঞ্চলীয় লোহার সেতু পুননিমার্ন/পুনবার্সন প্রকল্পের ১২টি গাডার্র ব্রীজ ও ৪টি লোহার সেতুর দরপত্র আহবান করা হয়।
এবিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে দূনির্তীর ফিরিস্তি- ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৩৭ নং নোটিশে উপজেলা পরিষদের ৫৭৮৯৫২০০৪ নং রোড আইডিতে দেখা যায় পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে একটি ব্রীজ নিমার্ন করা হবে।
খাল না থাকলেও রয়েছে নিবার্হী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার হাওলাদারের শ্বশুর বাড়ী। বাড়ীর পশ্চিম দিকে জেলখানা সংলগ্ন ড্রেনের উপর আরও দু’টি গাডার্র ব্রীজের স্থান দেখানো হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ সংযোগ সড়কের আইডি দেখানো হয়েছে সদর উপজেলার আয়লা জিসি ভায়া বোতলবুনিয়া এবং খাটাসিয়া। যে স্থানগুলো পৌরসভা থেকে বোতলবুনিয়া ১২ কিঃমিঃ, খাটাসিয়া ২২ কিঃমিঃ ও আয়লা ২৫ কিলোমিটার দুরত্বে।এভাবেই ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ নং নোটিশে পৌর সভার ৪ নং ওয়ার্ডে ৪টি ব্রীজ, ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে ৮টি ব্রীজ ও ৪টি লোহার সেতু নিমার্নের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭নং ওয়ার্ডে কলাতলা বাবরী মসজিদ সংলগ্নে ২টি ব্রীজ নিমার্নের স্থান দেখানো হয়েছে। পায়রাকুঞ্জ বাজার সড়কের আইডি দেখানো হয়েছে অথচ সেখানে উপজেলা পরিষদের কোন
রাস্তা নেই। রাস্তা গুলো সড়ক ও জনপদ বিভাগের পটুয়াখালী-পায়রাকুঞ্জ-মিজার্গঞ্জ-বেতাগী আঞ্চলিক মহাসড়ক। এছাড়াও তিন কোটি টাকায় ৮ ও ৯ ওয়ার্ডে পূর্বের নির্মিত লোহার সেতু’র স্থান দেখিয়ে দরপত্র আহবান করা হয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, টাউন কালিকাপুর বর মৃধা’র বাড়ীর সংলগ্ন একটি ও বাসষ্টান্ড রিয়াজ উদ্দিন মার্কেটের পশ্চিমপাশে আরও একটি আয়রন স্টাকচার সেতু ৬ মাস পুর্বে নিমার্ন করেছে পৌরসভা সেখানেই ৫৭৮৯৫৪২৭৮ এবং ৪২৭৬ নম্বর রোড আইডি দেখানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ও গোপন রাখার শর্থে এলজিইডি’র এক প্রকৌশলী বলেন, উপজেলা সংযোগ সড়ক, ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক ও গ্রামীন সড়কের ‘এ’ অথবা ‘বি’ নির্নয়কৃত এলাকায় প্রকারভেদে উন্নয়ন মুলক কাজ করা হয়। এগুলো সড়কের পরিচিতি কোড নম্বর।
কিন্তু গ্রামীন সড়কের আইডি ব্যবহার করে এর আওতার বাইরে কোন উন্নয়নই করতে পরবেনা এলজিইডি।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, আইবিআরপি প্রকল্পে গ্রামীন জনপদে জনসাধারনের চলাচলের জন্য যেখানে ঝুকিপুর্ন ও পরিত্যাক্ত লোহার সেতু রয়েছে সেখানে পুননিমার্ন, ব্রীজ ও কার্লভার্ট নিমার্ন করবে। কিন্তু প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী এলজিইডির বাস্তবায়নে কোন পৌরসভায় এধরনের উন্নয়ন কাজ করতে পারবেনা। কর্মকর্তা আরো বলেন ইতিমধ্যে পৌর সভার ৪নং ওয়ার্ডের আরামবাগ এলাকা সংলগ্নে নিবার্হী প্রকৌশলীর শ্বশুর বাড়ীর চারপাশে সৌন্দর্য্য বর্ধন করতে ও অনৈতিক সুবিধা নিতে তা বাস্তবায়নের পায়তারা চালাচ্ছে যা আজ দৃশ্যমান। প্রকৌশলী’র অনুগত ঠিকাদার অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই তড়িঘড়ি করে এই টেন্ডারের কাজ করছেন, সুযোগ নিয়েছেন এমনই একটি মূহুর্তে যখন গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাস আতংকে আতংকিত।
গ্রামীন জনপদের রোড আইডি ব্যবহার করে প্রথম শ্রেনীর পৌরসভায় গাডার্র ব্রীজতো দুরে কথা কোন উন্নয়ন করতে পারে না এলজিইডি। কিন্তু স্বজনপ্রীতি, অর্থের লোভ আর অদৃশ্য ক্ষমতার জোড়ে এই টেন্ডার আহবান করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, ব্রীজের গ্রাম বাজিতাঃ পটুয়াখালীর মিজার্গঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাজিতা ৪র্থ খন্ড গ্রামে আইবিআরপি প্রকল্প পরিচালক আবদুল হাই’র বাড়ী। তার নিজ গ্রামেই নিমার্ন করা হচ্ছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭টি গাডার্র ব্রীজ।
অথচ পাশের গ্রামসহ এক’ই উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় ২৩৯টি আয়রন ব্রীজ তথা (লোহার পুল) যার বেশীর ভাগই ঝুকিপূর্ণ। পাড়াপাড়ে দূভোর্গ পোহাচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ। পটুয়াখালী এলজিইডি অফিস সুত্রে জানাযায়, আইবিআরপি প্রকল্পের অথার্য়নে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের ২৮ এপ্রিল স্বাক্ষরিত ৪২ ও ৪৩ নং নোটিশে ১৯টি গাডার্র ব্রীজের দরপত্র আহবান করা হয়।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাযার্দেশ পেয়ে কাজ শুরু করেন। সরেজমিন অনুসন্ধ্যানে দেখা যায়, পিডি’র বাড়ীর চারপাশের মোনাসেফ সিকদার , হযরত আলী হাওলাদার ও আজাহার আলী হাওলাদার বাড়ীর চারদিক ঘিরে অন্তত ১২টি ব্রীজ নিমার্নাধীন রয়েছে। তাছাড়া বাড়ীর অদুরে শিশুর বাজারের দক্ষিন পাশে ১টি ও পূর্ব পাশে আরও ১টি ব্রীজের কাজ চলছে। বাজারের পুর্ব দিকে নিউমার্কেট সড়কে আরও ৩টি গাডার্র ব্রীজ নিমার্নাধীন।
সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা যায়, বাজিতা ৪র্থ খন্ড গ্রামে পিডি আব্দুল হাই’র দৃস্টি নন্দ।.
বিলাসবহুল ইঞ্জিনিয়ার কটেজ। তার বাস ভবনের আধা কিলোমিটার বৃত্ত এলাকা জুড়ে নিমার্ন করা হচ্ছে ১৭টি গাডার্র ব্রীজ। বাড়ীর দক্ষিন দিকে এগিয়ে গেলেই উত্তর বাজিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ছোট একটি মরা খালে নিমার্নাধীন ১৫ মিটারের ১টি গাডার্র ব্রীজ। তার একশ গজ উত্তরে রাস্তা কেটে নিমার্ন করা হচ্ছে আরও একটি গাডার্র ব্রীজ।
ব্রীজের কাজে নিয়োজিত নিমার্ন শ্রমিকরা জানান, দক্ষিন দিকে শিশুর বাজারের আশপাশে অন্তত ৮টি ব্রীজের কাজ চলছে। সেখান থেকে ৩শ গজ দক্ষিনে এগিয়ে যেতেই শিশুর বাজারের দক্ষিন পাশের খালের উপর একটি গাডার্র ব্রীজ। বাজারের পূর্ব দিকে আরও একটি ব্রীজ। বাজারে অনুসন্ধানের একপর্যায়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন বলেন, অপ্রয়োজনীয় ব্রীজ নিমার্ন করে সরকারের টাকার অপচয় করা হচ্ছে। এলাকায় একটি মাত্র ব্রীজ দরকার ছিল। সেখানে বহু ব্রীজ নিমার্ন করা হচ্ছে।
আশ পাশের এলাকায় বহু ঝুকিপূর্ণ লোহার পুল রয়েছে যা সংস্কার করা খুবই জরুরী। পারাপারে জনগনের দূভোর্গের যেন শেষ নেই। রিক্সা-গাড়ি পারাপার হতে পারেনা। পরিবহন ব্যবস্থা নেই তাই যে কোন সামগ্রী মাথায় করে বহন করতে হয়। তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুমে পুলগুলো পারাপারে মানুষ পানিতে পরে প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটে। এগুলো সংস্করণ না করে নিজের বাড়ীর আশ পাশে উন্নয়ন করা হচ্ছে। তিনি মতামত প্রকাশ করে বলেন,
যেখানে ছোট কার্লভার্ট হলেই যথেস্ট আর সেখানে গাডার্র ব্রীজ। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার আর সরকারি টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ তার পাশের চৈতা গ্রামে ঝুকিপুর্ণ সেতু আর বড় বড় সাকো পার হয় হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু
সেখান থেকে পূর্ব দিকে নিউ মার্কেটের রাস্তা ধরে দু’শ গজ এগিয়ে একটি গাডার্র ব্রীজ নিমার্ন করা হচ্ছে। সেখান থেকে
নিউমার্কেট পর্যন্ত আরও তিনটি ব্রীজ। পিডি’র বাড়ী পূর্ব দিকে দু’শ গজ দুরে আরও ২টি ব্রীজ নিমার্ন কাজ চলছে।
চলমান অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়,
মিজার্গঞ্জ উপজেলার দেউলী-সুবিদখালী ইউনিয়নের ডোকলাখালী গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে বেড়েরধন খাল। খালের উপর ৬০ মিটার দীর্ঘ লোহার সেতু। সিডরের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ সেতুটি মেরামত করা হয়নি আজও । জরাজীর্ণ পুলটি’র খুটি আকাবাকা হয়ে পড়ে আছে। রেলিং নেই বললেই চলে। উপরে ছাউনি অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাশঁ-কাঠ-তক্তা ও সুপারী গাছের চেরা দিয়ে জোড়াতালী দিয়ে কোন রকম চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুম এলেই পারাপারে ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠে সেতুটি। ইতিমধ্যে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অসংখ্য।
এবিষয়ে ডোকলাখালী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, বিশ বছর ধরে দেখছি এই পুলটি জরাজীর্ণ। এটি সংস্কারে কারও নজর নেই। অথচ বাজিতা গ্রামে নাকি বহু গাডার্র ব্রীজ নিমার্ন করা হচ্ছে। সেখানে পিডি’র বাড়ী তাই। এটা দুনির্তী ক্ষমতার অপপ্রয়োগ সহ-হিনমণ্যতার বহিঃপ্রকাশ। উপজেলার এক গ্রামে অপ্রয়োজনীয় ব্রীজ নিমার্ন আর অন্য গ্রামের মানুষ চরম দুভোর্গে থাকবে, এটা কেমন উন্নয়ন। শুধু
ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছুই না। এ বিষয়ে সরকারের উপর মহলের দৃষ্টি দেয়া উচিত। মিজার্গঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, প্রকল্প পরিচালক মহোদয় তার নিজ গ্রাম থেকেই ব্রীজ নিমার্ন কাজ শুরু করেছেন। আরও কিছু প্রক্রিয়াধীন আছে যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
পটুয়াখালী এলজিইডি ও উপজেলা কাযার্লয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় লোহার সেতু রয়েছে ১ হাজার ২০৭টি। এর মধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী সেতু রয়েছে ৬’শ। মিজার্গঞ্জে রয়েছে ২৩৯টি সেতু। যার বেশীর ভাগই ঝুকিপূর্ণ। সদর উপজেলায় ৮২টি লোহার সেতুর বেশীর ভাগই ঝুকিপুর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ঝুকিপুর্ণ শ্রীরামপুর ৩টি, ছোট বিঘাই ২টি, মাদারবুনিয়ায় ২টি, হাজীখালী হাইস্কুল সম্মুখে ১টি, তাফালবাড়িয়ায় ১টি ও জৈনকাঠী হাইস্কুলের সামনে ১টি। এভাবেই বাউফল উপজেলায় ২৯৫টি সেতুর মধ্যে ঝুকিপুর্ণ ১৯৫টি, গলচিপায় ২২০টির মধ্যে ১৩১টি ও কলাপাড়ায় ৫৩টির মধ্যে ৪০টি ঝুকিপুর্ণ হয়ে পড়েছে। সাধারণ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলোর দাবি প্রধান প্রকৌশলি ও প্রকল্প পরিচালক নীতিমালা তোয়াক্কা না করে অনুগত ঠিকাদার ও অদৃশ্য ক্ষমতার আদলে গ্রামীন জনপদ উন্নয়নের আইডি ব্যবহার করে লোপাট করছেন শতকোটি টাকা। এমনটাই তথ্য নিশ্চিত হয়। আমাদের সাথে থাকুন আগামীর সংখ্যায়।