সূরা ফালাক ও সূরা নাস এই দুটি সূরাই মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। ফালাক ১১৩ নম্বর সূরা, আয়াত ৫টি, রুকু ১টি আর সূরা নাসের আয়াত ৬টি, রুকু ১টি। এই দুই সূরার মাধ্যমে কোরআন শরিফ শেষ করা হয়েছে।
এই দুই সূরার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরনের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া।
আর আল্লাহতায়ালা এই দুই সূরার মাঝে সব অনিষ্ট থেকে হেফাজতের অসীম শক্তি ও প্রভাব রেখেছেন এবং বিভিন্ন হাদিসে এ সূরার ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো।
এক. হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার কি জানা নেই আজ রাতে আমার ওপর যে আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে এগুলোর মতো কোনো আয়াত দেখাও যায়নি এবং শোনাও যায়নি।
আর তা হলো কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। -সহি মুসলিম হাদিস নং-৮১৪
দুই. হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটনির পেছনে চলছিলাম, তিনি আমাকে বললেন, হে উকবা: আমি কি তোমাকে পঠিত দু’টি উত্তম সূরা শিখাব না, ফলে তিনি আমাকে শিখালেন কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। আমার মনে নেই, এ দু’টি সূরা কত বেশি আমাকে আনন্দ দিয়েছে। -আবু দাউদ হাদিস নং-১৪৬২
তিন. হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে জাবের তুমি পড়। আমি বললাম আমার মাতাপিতা আপনার জন্য কোরবান হোক, আমি কি পড়ব। তিনি বললেন, তুমি পড় কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস।
ফলে আমি সূরা দু’টি পড়লাম অতঃপর তিনি বললেন, এই দুই সূরা পড়তে থাকবে (কারণ) এই দুই সূরার মতো (অন্য সূরা) সহজে পড়তে পারবে না। – সুনানে নাসাঈ ৮/২৫৪ ও সহি ইবনে হিববান, হাদিস নং-৭৯৬
চার. হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি সূরা ইউসুফ, সূরা হুদ পড়ি। তিনি বললেন হে উকবা! তুমি কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক পড়। কেননা আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দ ও পৌঁছার ক্ষেত্রে সহজ অন্য কোনো সূরা পড়ার মধ্যে নেই। যদি সম্ভব হয় তাহলে তোমার থেকে এটা ছুটে না যায়। সুতরাং তুমি এটা পড়তে থাকবে। -মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৪০
পাঁচ. হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়তেন।
তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। -সহি বুখারি ৫০১৭, সুনানে আবু দাউদ : ৫০৫৮, জামে তিরমিজি, হাদিস নং-৩৪০২
ছয়. হজরত উকবা ইবনে আমের জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার ওপর কিছু আয়াত নাজিল হয়েছে, যা আমি এর মতো অনুরূপ দেখিনি। কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। -জামে তিরমিজি, হাদিস নং-২৯০২