স্ত্রীর ঘরে পাঁচ সন্তান থাকা সত্ত্বেও শহিদ তৃতীয় বিবাহ করার প্রস্তাব দিয়েছিল নিঃসন্তান চাচা-চাচির ঘরে পালিত কিশোরী কন্যা কাজলীকে।
কিন্তু শহিদের আবদার মেটাতে ঘোর আপত্তি জানান চাচা দেলোয়ার ও চাচি পারভীন বেগম। সেই সঙ্গে শহিদের এক ফুফাতো ভাই আরিফের সঙ্গে কাজলীকে বিবাহ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এ ঘটনায় আক্রোশের বশবর্তী হয়ে আপন ছোট চাচা-চাচি ও পালিত কিশোরী কন্যা কাজলীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে শহিদ। একটি মোবাইলের সূত্র ধরে ঘটনার ৩৯ মাস পর পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের মূলনায়ক শহিদকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পটুয়াখালীর পুলিশ।
সোমবার দুপুরে পটুয়াখালী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এসপি মোহাম্মদ মইনুল হাসান এমন তথ্য তুলে ধরেন। সোমবার অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হয়েছে। ঘটনার বরাত দিয়ে এসপি মইনুল হাসান বলেন, ২০১৭ সালের ২ আগস্ট পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের ছৈলাবুনিয়া গ্রামে গভীর রাতে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটে।
৬৫ বছরের বৃদ্ধ দেলোয়ার মোল্লা ও তার স্ত্রী পারভীন বেগমকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। একই রাতে নিঃসন্তান নিহত দম্পতির পালিত কিশোরী কন্যা কাজলীকে গলা কেটে হত্যার পর তার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।
তিনি জানান, এ ঘটনার পর নিহত কাজলীর ব্যবহৃত নোকিয়া মোবাইল ফোনটি (মডেল-১২৮০) খোয়া যায়। প্রথমে ওই বছরের ৩ আগস্ট নিহত ওই দম্পতির বৃদ্ধ বড় ভাই ইদ্রিস মোল্লা অজ্ঞাতনামা আসামি করে গলাচিপা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে নিহতের বোন পিয়ারা বেগম ২২ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। রোমহর্ষক এ ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই ভয়ে এলাকা ত্যাগ করেন।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ভয়ে অন্যদের সঙ্গে শহিদও এলাকা ছেড়েছে। প্রাথমিকভাবে খুনের ঘটনা উদঘাটন করতে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয় পুলিশ। খুনের ঘটনার পর একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্থা মাঠে নামে। দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। পুলিশের চরম ব্যর্থতা নিয়ে নানা মহলে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। খুনের তিন মাস পর পটুয়াখালীর এসপি পদে মোহাম্মদ মইনুল হাসান যোগ দিয়ে একটি অপরাধ সভায় উত্থাপন করেন আলোচিত এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা। মূলত এ ঘটনা নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমানের আলাদা আগ্রহ থাকায় বিষয়টি ওই সভায় তুলে ধরেন তিনি। ওই সভায় নিবিড় অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন এসপি।
এরপর জেলা পুলিশের কয়েকটি টিম নিবিড় অনুসন্ধানে নামে বলে জানান এসপি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এসপি আরও বলেন, অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় গত ১০ অক্টোবর গলাচিপা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ন কবিরের নেতৃত্বে পুলিশ রাজধানীর পল্লবী থানার বাউনিয়া বাঁধ এলাকা থেকে মোহাম্মদ আবু রায়হানের কাছ থেকে নিহত কাজলীর নোকিয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আবু রায়হান জানায় তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলায়। শহিদের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ি হিজলা এলাকায়। ২০১৭ সালে রায়হানের ফুপুর ননদের স্বামী শহিদ মোল্লা ওই মোবাইলটি তাকে গিফট করে।
তিনি বলেন, ওই মোবাইলের সূত্র ধরে খুনের ঘটনায় জড়িত শহিদকে সাভার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার পর শহিদ তার প্রকৃত নাম পরিবর্তন করে জাহাঙ্গীর পরিচয়ে সাভার এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠেছে।
অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। ঘটনার পর সব আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে প্রথম স্ত্রী সাবিনাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করত শহিদ।