December 23, 2024, 5:08 pm

শর্ত ‘কঠিন’, তাই লাইসেন্সের আবেদনই করেনি তিন হাজার ক্লিনিক-হাসপাতাল

Reporter Name
  • Update Time : Friday, November 27, 2020,
  • 105 Time View
Clinic and medical

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ব্ল্যাড ব্যাংক চালানোর সুযোগ নেই।

 

অনুমোদনহীন হাসপাতালগুলোকে তাই অনলাইনে আবেদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। এর মধ্যেও আবেদন করেনি আগের তালিকায় থাকা দুই হাজার ৯১৬টি হাসপাতাল-ক্লিনিক।

১০ নভেম্বর সারা দেশে অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয়। পরে বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো তথ্য নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা তৈরি করে অধিদফতর।

৮ নভেম্বর বিভাগীয় পরিচালকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম নিজ নিজ জেলার অনিবন্ধিত, অবৈধ ও সেবার মান খারাপ এমন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া ও প্রয়োজনে সিলগালা করার নির্দেশ দেন বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ২০১৮ সালে লাইসেন্স নেওয়া ও নবায়নের জন্য অনলাইনে আবেদনের পদ্ধতি চালু হয়। তাতে কোনও একটি শর্ত পূরণ না হলে রেজিস্ট্রেশন হয় না, নবায়নও হয় না। অনেকে ঠিকমতো শর্ত পূরণ করতে না পেরে আবেদন করছে না বলেও জানা গেছে। আর অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক বলতে অধিদফতর তাদেরকেই ধরছে যারা অনলাইনে আবেদন করেনি।

 

এদিকে, হাসপাতাল মালিকরা বলছেন, লাইসেন্স করা ও নবায়নের নতুন নিয়মে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। শর্তগুলোও কঠিন। ২০১৭ সালের আগে ক্লিনিকের নবায়নের জন্য শুধু ফি জমা দিতে হতো পাঁচ হাজার টাকা। সঙ্গে ভ্যাট। যেটা এখন করা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা।

এর সঙ্গেও আছে ভ্যাট। ডায়াগনস্টিক সেন্টার নবায়নে যেখানে আগে ছিল ভ্যাটসহ এক হাজার টাকা, বর্তমানে সে ফি হয়েছে ১৫ হাজার টাকা।

ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা জেলার ভেতরে আছে, তবে মহানগরের বাইরে এমন অবৈধ হাসপাতালের তালিকা করে স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে।

প্রতিটি ক্লিনিককে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে আলাদা করে। আমরা হাসপাতাল বন্ধ করতে পারি না। কেবল কার্যক্রম স্থগিত করতে পারি।’ ঢাকা জেলায় প্রায় ৩০টি ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

চলতি সপ্তাহে ঢাকা জেলা মেট্রোপলিটনে থাকা ক্লিনিক-হাসপাতালের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে বলেও জানান ডা. মইনুল হোসেন।

 

বেশিরভাগ ক্লিনিকগুলোর প্যাথলজি ল্যাবে অসঙ্গতিও পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলোতে কনসালটেন্ট প্যাথলজিস্ট নেই। টেকনোলজিস্ট দিয়ে ল্যাব চালানো হচ্ছে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও নেই। চিকিৎসকও থাকেন না অনেক সময়।’

দেশের সব সিভিল সার্জনদের কাছ থেকে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর তালিকা স্বাস্থ্য অধিদফতর পেয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা। তিনি বলেন, যেহেতু নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনলাইনে হওয়াটা নতুন তাই অনেকে ভালো করে বুঝতে পারেনি। অনেকেই নিবন্ধনে অনীহা প্রকাশ করেছে।

 

আবার কোভিড পরিস্থিতির জন্য অধিদফতর ঠিকমতো সময় দিতে পারেনি বলেও জানান তিনি।

ডা. ফরিদ আরও জানান, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬১০৫টি হাসপাতাল-ক্লিনিক ডায়গনস্টিক সেন্টারকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ৩১০৯টি লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে। যারা অনলাইনে সঠিকভাবে আবেদন করেছে তারা সব শর্ত পূরণ করে থাকলে তাদেরকেও লাইসেন্স দিতে পারি।‘

 

আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স পেতে কঠিন শর্ত ছিল জানিয়েছেন হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিকরা। সে কঠিন শর্তে এবার অধিদফতর কিছুটা ছাড় দিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘আগেতো পরিবেশ অধিদফতর আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ছাড়পত্র দিতে হতো। সেক্ষেত্রে একটু নমনীয় হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।’

 

লাইসেন্স পেতে যে শর্ত মানতে হবে

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি এবং নবায়ন ফি পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অপরদিকে, বিভাগীয় ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০ থেকে ৫০ শয্যার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নবায়ন ফি ৫০ হাজার টাকা, ৫১ থেকে ১০০ শয্যার জন্য এক লাখ টাকা, ১০০ থেকে ১৪৯ শয্যার জন্য দেড় লাখ টাকা ও ২৫০ শয্যার জন্য নির্ধারণ হয় দুই লাখ টাকা।

একইভাবে একই শয্যা সংখ্যা ধরে জেলা হাসপাতালগুলোর জন্য ধরা হয় ৪০ হাজার টাকা, ৭৫ হাজার টাকা ও এক লাখ টাকা। উপজেলা পর্যায়ে এ ফি নির্ধারণ হয় ২৫ হাজার, ৫০ হাজার, ৭৫ হাজার ও এক লাখ টাকা। তবে এসব হাসপাতালে কমপক্ষে তিন জন এমবিবিএস চিকিৎসক, ছয় জন নার্স ও দুই জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার শর্তও আছে। প্রতিটি শয্যার জন্য থাকতে হবে ৮০ বর্গফুট জায়গা। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রোপচার কক্ষ, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং নারকোটিকসের লাইসেন্সও থাকতে হবে।

 

এরসঙ্গে আরও দরকার হবে ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) ও বিআইএন (বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর)। সঙ্গে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। শয্যা বেশি হলে আনুপাতিক হারে জনবলও থাকতে হবে। আবেদনের ভিত্তিতে অধিদফতরের টিম সরেজমিন পরিদর্শন করে লাইসেন্স দেবে।

 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি আগে সবাইকে নিয়মের ভেতর আনতে। কে কোন ধাপে আটকে আছে সেগুলো বোঝার চেষ্টা করবো আমরা। তারপরও যাদের নবায়ন পেতে অসুবিধার যৌক্তিক কারণ আছে তাদের বিষয়টাও দেখা হবে। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে লাইসেন্স এড়িয়ে যাচ্ছে তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71