December 27, 2024, 8:53 am

হিজাব নিয়ে কথা তুললে বেগম রোকেয়ার শালীনতার ছবি তুলে ধরা হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : Tuesday, December 8, 2020,
  • 174 Time View

রোকেয়াকে নিয়ে এমনিতে আমার কোনও সমস্যা নাই। শি ইজ অ্যাবসোলুটলি ফাইন। বিপ্লবী। কৌশলী অ্যাজ ওয়েল। কিন্তু যেভাবে রাষ্ট্র ঘটা করে রোকেয়া দিবস” পালন করে তাতে আমার সন্দেহ হয়। এবং আপামর পুরুষ সমাজ য্যামনে সারাটাবছর আমাদের “বেগম রোকেয়ার মতো হওয়া

উচিত” বইলা সবক দিতেই থাকে দিতেই থাকে তাতে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয় এরা ঠিকঠাক রোকেয়ারে রিড করে নাই বা করতে পারে নাই বা করতে চায় নাই। তার লম্বা হাতার ব্লাউজ পরিহিত “শালীন” অবয়ব পুরুষসমাজরে এক ধরনের কমফোর্ট দ্যায় আর কি। কিন্তু তিনি তো সেই নারী যিনি বলেছিলেন

যাহা যাহা পুরুষ পারিবে তাহা তাহাই নারী পারিবেঊনিশ শতকে নারী যখন আক্ষরিক অর্থেই অবরোধবাসীনি- সেই সামন্ততান্ত্রিক, গোঁড়া ধর্মীয় আবহে এই সৎ উচ্চারন করেছিলেন রোকেয়া।

পুরুষতন্ত্র রোকেয়াকে খন্ডিতভাবে পাঠ করে নিজেদের পছন্দমতো একটা চেহারায় হাজির করতে চেয়েছে।আজকের নারীবাদকে সমালোচনা করতে গিয়ে বিপরীতে সুচতুরভাবে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে রোকেয়াকে। তাঁকে “ভালো মুসলমান নারী, শালীন, স্বামীর দেওয়া স্বাধীনতা দিয়ে নিজেকে ডেভলপ করা ইত্যাদি ইত্যাদি মোড়কে আবৃত করে বাংলার সমাজ স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছে।

এই রোকেয়াই কিন্তু লিখেছেন, “আমাদিগকে প্রতারণা করিবার নিমিত্ত পুরুষগণ ওই ধর্মগ্রন্থগুলিকে ‘ঈশ্বরের আদেশপত্র’ বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন। এই ধর্মশাস্ত্রগুলি পুরুষরচিত বিধিব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে। মুনিদের বিধানে যে- কথা শুনিতে পাও, কোনো স্ত্রী মুনির বিধানে হয়তো তাহার বিপরীত নিয়ম দেখিতে পাইতে।

 ধর্মগ্রন্থসমূহ ঈশ্বরপ্রেরিত বা ঈশ্বরাদিষ্ট নহে। এই কথা এখন কোনও নারী অন্য কোনও মাধ্যম দূর কি বাত বই বাইর কইরা লিখুক তো দেখি! বা এই সময়ে বইসা রোকেয়াও যদি লিখতো তার ভাস্কর্য্য যেখানে যেডি আছে বাইড়াইয়া ভাঙতো। অথবা এই কথাগুলি রোকেয়া দিবসের সরকারী অনুষ্ঠানে যদি কেউ বলে কওমী জননীর গদি নইড়া যাবে।

কোথাও কোথাও ধর্ম আর পুরুষতন্ত্রকে একসাথে আক্রমণ করেছেন তিনি। যেসব শব্দ নিয়ে আমরা এখন নাড়াচাড়া করি, আলোচনা করি বেগম রোকেয়া সেই আমলেই সেসব নিয়ে সুতীব্রভাবে শ্লেষ করেছেন. দাসী  শব্দে অনেক শ্রীমতী আপত্তি করিতে পারেন।

কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, “স্বামী” শব্দের অর্থ কি? দানকর্ত্তাকে “দাতা” বলিলে যেমন গ্রহণ কর্ত্তাকে “গ্রহীতা” বলিতেই হয়, সেইরূপ একজনকে “স্বামী, প্রভু, ঈশ্বর ” বলিলে অপরকে “দাসী” না বলিয়া আর কি বলিতে পারেন।

তো বেগম রোকেয়ার দর্শন থেকে সুবিধামতো বিভিন্ন অংশ বাদ দিয়ে পুরুষেরা তাকে মহিয়ষী নারী বানিয়ে দিয়েছে। রক্ত মাংসের বেগম রোকেয়ার বৈধব্যের যন্ত্রনা নিয়ে কথাবার্তা বিশেষ সামনে আসেনা যতটা আসে স্বামী এবং ভাই এর দয়ায় ইংরেজি শিক্ষা পাওয়ার বিষয়টি।

পর্দাপ্রথা নিয়ে ট্রেনে কাটা পড়া নারীর ছিন্নবিচ্ছিন্ন শরীরের গল্প অত করা হয় না যতটা অংকিত হয় তাঁর ফুলস্লিভ ব্লাউজ। এখনও হিজাব আর পর্দার আধিক্য নিয়ে কথা তুললে বেগম রোকেয়ার শালীনতার ছবি সামনে তুলে ধরা হয়।

ছোটবেলা থেকে “নারী স্বাধীনতা” বলতে বেগম রোকেয়ার নারী শিক্ষার কথা শুনে আসছি কারণ এইটা নিরাপদ। গত শতাব্দীতে বেগম রোকেয়া লড়াইটা জারি রেখে গেছেন অন্তত শিক্ষার আলোটা আনতে। তো আমাদের ক্রমশ চালাক সুবিধাবাদী পুরুষ শিক্ষিত দাসী পেতেই নারীশিক্ষার পক্ষে কাজ করেছেন।

সেই শিক্ষা নিয়ে কোনো নারী সত্যিকারের আলোকপ্রাপ্ত হলে, বঞ্চনা আর ডিসক্রিমেনেশনের বিরুদ্ধে কথা বললে নিষ্ঠার সাথে তার টুঁটি চেপে ধরেছেন।

আমার কাছে এইটা খুবই ইন্টারেস্টিং লাগে যে রোকেয়ার মতো বিপ্লবী নারীরে পুরুষেরা কীভাবে এতো “মহিয়ষী” হিসেবে হাজির করলো, কীভাবে তাঁর বিষটুকুর মন্থন থেকে বাঁইচা ফুলস্লিভ ব্লাউজের মধ্যে মধু খুুঁইজা পাইলো, টেকনিকটা ঠিক কি!

বেগম রোকেয়ার মতো আত্মশক্তিতে বল পাওয়া এক নারী যিনি বলেছিলেন, “আশৈশব আত্মনিন্দা শুনিতেছি, তাই এখন আমরা অন্ধভাবে পুরুষের শ্রেষ্ঠতা স্বীকার করি, এবং নিজেকে অতি তুচ্ছ মনে করি” সেই নারীরে পুরুষেরা হঠাৎ দলে দলে কিজন্য মহিয়সী নারী বানিয়ে দিলেন, তাদের কেন

এতো দয়ামায়া হইলো তাঁকে মেয়েদের অনুসরণ করা উচিত বলে ঘোষণা করতেছেনসেইটা খুবই সন্দেহজনক লাগে আমার।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71