December 24, 2024, 1:47 am

মেয়েদের ফাঁদে ফেলত দিহান

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : Friday, January 15, 2021,
  • 132 Time View

রাজধানীর কলাবাগানে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী আনুশকা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহান আনুশকার আগেও একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিল। এদিকে প্রভাবশালীদের চাপে পড়েই দিহানের তিন বন্ধুকে আড়াল করা হয়েছে বলে পরিবারের দাবি।

জানা যায়, নিজের বাবার অর্থবিত্ত, দামি গাড়ি উপহারসামগ্রী দিয়ে মেয়েদের প্রভাবিত করত দিহান। দিহান ‘ও’ লেভেল পাস করে গেল বছরের আগস্ট মাসে। বর্তমানে দিহান কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত নেই। তবে শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনাও এর আগে দিহান ঘটিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

দিহানের তিন বন্ধুর মধ্যে একজন একটি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আত্মীয়। তারা দুজন সম্পর্কে চাচাতো ভাই। ফারদিনের আরেক বন্ধু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তাদের দুজনের বাসা ধানমন্ডি এলাকায় এবং আরেকজনের বাসা কলাবাগান থানাধীন ভূতের গলি এলাকায়।

এর আগে ৮ জানুয়ারি এ ঘটনার একমাত্র আসামি দিহানকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তুললে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি। এ ছাড়া একই দিনই নিহত ছাত্রীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ডা. সোহেল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ফলে যৌন ও পায়ুপথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে।’

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পর তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হয়ে যান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে বন্ধু দিহানের মোবাইল কল পেয়ে বাসা থেকে বের হন রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিন। এরপর কিশোরীকে কলাবাগানের ডলফিন গলির নিজের বাসায় নিয়ে যান দিহান। ফাঁকা বাসায় তাকে ধর্ষণ করা হয়।

অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহানসহ চার বন্ধু তাকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় আনুশকার বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ ঘটনার মামলায় দিহান গ্রেফতার রয়েছেন। তিনি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

অন্যদিকে , জিজ্ঞাসাবাদে দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা অথবা সাড়ে ১১টার দিকে একজন মেয়ে আসে পান্থনিবাস-২ অ্যাপার্টমেন্টে। দিহান দোতালার ডি-২ ফ্ল্যাট থেকে নিজেই নেমে এসে ওই মেয়েকে বাসায় নিয়ে যান। তবে ওই মেয়ে প্রবেশের বিষয়ে তিনি রেজিস্ট্রার বইয়ে কোনো তথ্য লেখেননি বলে জানান দুলাল।

দুলাল আরো জানান, প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুপুর ১টা অথবা সোয়া ১টার দিকে দিহান ওই মেয়েটিকে পাঁজাকোলা করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে আনেন। গ্রাউন্ড ফ্লোরে পার্কিংয়ে থাকা গাড়ির পিছনের সিটে তোলেন। এরপর দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে যান। এরপর ওই মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ভয় পেয়ে যান। এ কারণে তিনি ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পালিয়ে যান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, গত বছরের নভেম্বর থেকে দিহানের সাথে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক চলমান ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। আমরা দিহানের বাসা থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। তবে, তদন্তের স্বার্থে সকল বিষয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত রিপোর্টসহ অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার ডকুমেন্ট আমাদের হাতে আসলেই এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছি। ফরেনসিক চিকিৎসক অভিমত দিয়েছেন- ‘বিকৃত’ যৌনাচারের কারণে ওই মেয়েটির যৌনাঙ্গ এবং রেক্টাম থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে।

আনুশকা নূরের ময়নাতদন্ত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাভাবিক পেনিস দ্বারা রেক্টাম ও যৌনাঙ্গ ব্যবহার করলে এতোটা ভয়াবহ পরিণতি হওয়া কথা নয়। শরীরের নিম্নাঙ্গে ‘কোন ফরেন বডি সাইজ’ কিছু একটা ব্যবহার করা হয়েছে। এক কথায় সেখানে বিকৃত যৌনাচার করা হয়েছে।

বিকৃত যৌনাচারের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে এই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যোনিপথ ও পায়ুপথ দুই রাস্তা থেকেই আমরা রক্তক্ষরণের আলামত পেয়েছি। আমরা জোর জবরদস্তির কোনো আলামত পাইনি। তবে যোনিপথ ও পায়ুপথে কিছু ইনজুরি আমরা পেয়েছি। মূলত সেই ইনজুরিগুলোর জন্যই সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। কিন্তু বডির অন্য কোথাও জোরাজুরির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71