দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর করা মামলা ও সময় মতো খালাস নিতে না পারলেও চার মাসের নিলামের কারণে বন্দরে শেড ও ইয়াডে বিদেশ থেকে আনা গাড়ির জট কমেছে। গত ৫ বছরে মোংলা বন্দরে নিলামে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫৫টি গাড়ি।
এর মধ্যে গত ৪ মাসেই নিলামে হয়েছে ৫ শতাধিক গাড়ি। যার মধ্যে ৯৯টি মোংলা বন্দরের শেড ও ইয়াডে থেকে ছাড় করতে পেরেছেন ক্রেতারা। আর করোনা পরিস্থিতে মোংলা বন্দর দিয়ে ৪৫.৮ শতাংশ গাড়ি আমদানি কমলেও বেড়েছে ১৪.৮ শতাংশ রাজস্ব। চলতি অর্থ বছরে ৫ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হলেও এখনও পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থ বছর শেষ হওয়ার আগে রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে মোংলা কাস্টম হাউজ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও মোংলা কাস্টম হাউজ সূত্রে জানায়, মোংলা বন্দর ব্যবহার করে দুই শতাধিক গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশে রিকন্ডিশনসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের গাড়ি আমদানি করে। নিয়ম অনুযায়ী আমদানি করা এসব গাড়ি বন্দরে পৌঁছার ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় করিয়ে না নিলে সেগুলো সরকারি নিলামের তালিকায় চলে যায়। পরে শুল্ক ও রাজস্ব আদায়ে কাস্টম কর্তৃপক্ষ তা নিলামে তোলে। তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মামলার কারণে নিলাম প্রক্রিয়া ক্রেতাদের তেমন সাড়া দেখা যায় না। তবে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর ও আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সমস্যা সমাধান করা হলে নিলামে আগ্রহ বাড়ে ক্রেতাদের। সেই সাথে আমদানি কারক প্রতিষ্ঠানগুলো সময় মতো তাদের গাড়ি ছাড় করায় আগ্রহ দেখানোর ফলে মোংলা বন্দরের শেড ও ইয়াডে আমদানি করার গাড়ির জট এখন আর নেই।
সরোজমিনে মোংলা বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, মোংলা বন্দর শেড ও ইয়াডে সারিবদ্ধ ভাবে পরে রয়েছে টয়োটা, নিশান, নোয়া, এক্সজিও, প্রোবক্স, প্রিমিও, লেক্রাস, পাজেরো, পিকআপ, এলিয়ান ও মার্সিডিসসহ বিলাশ বহল অসংখ্য গাড়ি। এখান থেকে আমদানি গাড়ি সময় মতো না নেওয়ায় ও শুল্ক জটিলতার অনেক গাড়ি এখানো পড়ে রয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, চলতি অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানিকারকরা মোংলা বন্দর দিয়ে কয়েক হাজার গাড়ি আমদানি করেছেন। বর্তমানে বন্দরের শেড ও ইয়াডে ২ হাজার ৬৪৩টি গাড়ি রয়েছে। যার মধ্যে নিলামযোগ্য অসংখ্য। এর মধ্যে ৯৬১টি রয়েছে ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আনা।
মোংলা কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. হোসেন আহমেদ বলেন, মোংলা বন্দরে আমদানি রিকন্ডিশন গাড়ির বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর এ বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিচ্ছে। অনেক পুরাতন গাড়ি আছে যা আসলে আমদানীযোগ্য ছিল না। এ গাড়ির বিষয়ে সিপি (ক্লিলিয়ারেন্স পারমেট) একটা প্রশ্ন থাকে, এমন বিষয়গুলো এনবিআর সরাসরি দেখছে। এমন আমদানি অযোগ্য গাড়ির সংখ্যা রয়েছে ১৫০টির উপরে। সবকিছু বিবেচনায় বানিজ্য মন্ত্রণালয় যদি পারমিট করে এ ধরনের গাড়িগুলো কিন্তু আমরা নিলামে উঠাতে পারব।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মামলা ও তাদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বারবিডা) গাড়ি নিলামকে বাধাগ্রস্ত করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতে গাড়ির বাজারে ধস নেমেছে। ৬ মাস আগেও বন্দরে অনেক গাড়ি ছিলো, যার কারণে বন্দরে জট সৃষ্টি হয়েছিল। বারবিডার সাথে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, কিছু নতুন গাড়ি কিন্তু আমরা এখনও পর্যন্ত নিলামের বাইরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ বিষয়গুলো নিয়ে হাইকোর্ট এ গিয়েছেন। হাইকোর্ট অনেক সময় পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিলাম স্থাগিত করার রায় দেন। এছাড়া প্রতিটা নিলামের আগে কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ করা হচ্ছে। পাশাপাশি হাইকোর্ট যখন যে ধরনের তথ্য আমাদের কাছে চাচ্ছে সাথে সাথে আমরা কিন্তু সে তথ্যগুলো পাঠিয়ে দিচ্ছি। ফলে এখন আর হাইকোর্ট যত্রতত্র নিলাম স্থাগিত আদেশ দিচ্ছে না। নিলামের সার্বিক বিষয়গুলো দেখলে নেট রেজাল্ট কিন্তু ভালো।