বখাটেদের উৎপাত থেকে রক্ষা করতে পাঁচ মাস আগে বাক ও মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে আশ্রয় দেন গৃহবধূ রুমা বেগম। আর গত ১৫ দিন আগে পাগলীর গর্ভে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান।
আশ্রয়দাতা রুমা শিশুটির নাম রেখেছেন ‘রাইসাথ। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহ আগে প্রতিবন্ধী ওই নারীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অপরদিকে পরিচয়হীন শিশুটিকে উদ্ধার করেছেন গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম। পরে উপজেলা সমাজসেবা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিছেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের হরিদেবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংলগ্ন এলাকায়। সংশ্লিষ্ট পুলিশ, উপজেলা সমাজসেবা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সূত্রে এসব তথ্য জানাগেছে।বাক ও মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে আশ্রয়দাতা গলাচিপার গোলখালী ইউনিয়নের হরিদেবপুর গ্রামের রুমা ও তার স্বামী বারেক মিয়া পেশায় দিন মজুুুুর।
গভীর রাতে নারী কণ্ঠের কান্নার শব্দ পেয়ে ঘরে বাইরে গিয়ে দেখতে পান প্রতিবন্ধী এ নারীকে। তাকে পরে প্রতিবন্ধী নারীকে আশ্রয় দিয়ে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন এ দম্পতি।রুমা বেগম বলেন, ‘গত পাঁচ মাস আগে গভীর রাতে রাস্তায় নারী কণ্ঠের কান্নাকাটি শব্দ শুনি।
অনেক্ষণ পরে আমি ও আমার স্বামী রাস্তায় নেমে আসি। এই সময় কিছু বখাট্টা (বখাটে) পোলাপান আমাাগো (আমি ও আমার স্বামী) দ্যাইখ্যা পলাইয়া যায়। আমরা অনেক্ষণ অপেক্ষা করে ঘরে আইয়া পর্।ি পরের দিন সকালে ঘুম দিয়া উঠ্যা দেহি (দেখি) পাগলী আমাগো ঘরের সামনে খাড়াইয়া (দঁাড়িয়) আছে। পাগলীরে দেইখ্যা মায়া হয়। সকালে ভাত খাইতে দেই। এর পরে যাইতে কইলেও এদিকে সেদিক ঘোরাফেরা কইররা আবার আমাগো ঘরে আয়। দুইদিন পর আমি আমার স্বামীরে কইয়া রান্না ঘরে একটা চহি (তক্তপোষ) কইরর্যা থাকতে দেই।
এর দুইদিন পরে পাগলীরে গোসল করানোর সময় আমার সন্দেহ হয়। আমি আমার স্বামীরে (বারেক মিয়া) সন্দেহের কতা জানাইলে সে ডাক্তারের কাছে লইয়া যাইতে কয়। আমরা পরের দিন স্থানীয় এক ডাক্তারের ধারে লইয়া গেলে ডাক্তার সাহেব জানায়-পাগলী গর্ভবতী। তহন আমাগো চিন্তা বাইড়্যা (বেড়ে) যায়।
স্থানীয় গোলখালী ইউনিয়ন পরিষদেও মনির মেম্বর আমার ভাই। হেরে (ভাই মনির) আর এলাকার লোকজনের জানাই। সবাই কয় -‘তোমার বাড়ি আইছে হালাবা কই; খাওন দেও; তোমাগো আল্লায় দেখপে।থ এর মধ্যে গত ১৫ দিন আগে (৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে নয়টার দিকে পাগলীর একটা মাইয়া হয়। এহন সবাই সুস্থ আছে। আমি সমাজসেবার আইনমত দত্তক নিমু।
এ ঘটনা সম্পর্কে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘আমার পরিচয়হীন একটি শিশুর জন্মের কথা শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শিশুটিকে উদ্ধার করে আপাতত প্রতিবন্ধী নারীকে আশ্রয়দাতা রুমার কাছেই রেখে দিয়েছি।
বাক ও মানসিক প্রতিবন্ধী নারী সম্পর্কে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী নারী সুস্থ আছে। তবে তার নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা সমাজসেবা কর্মা কর্তা মো. অলিউল্লাহ বলেন, ‘উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার। বোর্ডে কেউ বাচ্চাটির জন্য আবেদন করলে তখন বোর্ড সিদ্ধান্ত নিবে। এ বিষয় গলাচিপা উপজেলা নির্বহী অফিসার আশিষ কুমার বলেন, ‘উপজেলা সমাবসেবার শিশু কল্যাণ বোর্ডে আগ্রহী কেউ আবেদন করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিশুটির খাদ্য ও চিকিৎসার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।