কানাডিয়ান মিডিয়া আপনার লেখাটা খুলে দেখার আগে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট এর দিকে নজর দেয়। ওখানে আপনি কী করেন, কী লেখেন, সেইগুলোর ভেতর দিয়ে ঘুরে এসে আপনার লেখাটা খুলে বসেন।’ – এইটুকু শুনে চমকে উঠেছিলাম। কানাডার কর্পোরেট অফিসগুলোর নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া নীতিমালা আছে, সাংবাদিকদেরও আছে, কিন্তু লেখা ছাপা হওয়া না হওয়ার সাথে লেখকের, সাংবাদিকের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের সম্পর্ক কী?
সেই সম্পর্কটাই ব্যাখ্যা করছিলেন রজার বেলগ্রেভ, টরন্টো স্টারের কলামিষ্ট। অভিবাসী সাংবাদিকদের কানাডিয়ান জার্নালিজমের ধারায় তৈরি করতে ‘নিউ কানাডিয়ান মিডিয়ার (এনসিএম) এর প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কথা এর আগেও বলেছিলাম।
‘তা হলে কানাডিয়ান মিডিয়া বাইরের লেখকদের (যারা প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত নন) লেখা কিভাবে মূল্যায়ন করে? মানে কোন লেখাটা ছাপা হবে, কোন লেখাটা ছাপা হবে না- এই সিদ্ধান্তটা কীভাবে হয়!’- প্রশ্নটা আসলে আমাদের সবারই মনের প্রশ্ন। আমরা মানে- আমাদের যাদের পরিচয়- এথনিক সাংবাদিক, পলিটিশিয়ানদের অনেকেই এখন ‘কালচারাল মিডিয়া’ নামেও ডাকে। আমরা যারা কানাডিয়ান মূলধারার পত্রপত্রিকায় আমাদের লেখা ছাপ হোক- তেমন স্বপ্ন দেখি, তাদের জন্য তো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
কিন্তু লেখা দেখার আগে লেখকের সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে তারা নজর দেয় কেন? কারো লেখা প্রকাশের আগে কানাডিয়ান মিডিয়া নিশ্চিত হতে চায়, যিনি লিখছেন, যে বিষয়ে লিখছেন, এই বিষয়ে তিনি এক্টিভিজম করছেন কী না। যেই বিষয় নিয়ে কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্টিভিজম করছেন- সেই বিষয় নিয়ে তার লেখা প্রকাশ না করার নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করে কানাডিয়ান মিডিয়া।
টরন্টো স্টারের রিপোর্টারদের জন্য যে লিখিত নীতিমালা আছে, তাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, একজন সাংবাদিক একই সাথে সংবাদ এবং সাংবাদিক- দুই ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবেন না। যিনি সাংবাদিক তিনি কেবল সাংবাদিকতাই করবেন, সংবাদ হবেন না, তিনি যখন সংবাদ হয়ে উঠবেন- তখন তার সাংবাদিকতার ইতি। এক্টিভিজমকে সংবাদ হিসেবে দেখে তারা, ফলে এক্টিভিষ্টকে সংবাদ কিংবা সংবাদপত্রের লেখক হিসেবে তারা অনুমোদন করে না।
এক্টিভিষ্টের সাংবাদিক হওয়ায় সমস্যা কোথায়? সমস্যা আছে। একজন এক্টিভিষ্ট একটি পক্ষের হয়ে তার লড়াইটা করেন। কিন্তু সাংবাদিককে কোনো পক্ষের হলে চলে না। তিনি যখন কোনো পক্ষের হয়ে যান- তখন তিনি আর সাংবাদিক থাকেন না, তখন তিনি হয়ে যান এক্টিভিষ্ট।
শওগাত আলী সাগর, প্রধান সম্পাদক, নতুনদেশ, কানাডা।