তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার চরাঞ্চল এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের দোমহনীতে তিস্তা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে। ফলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ জলকপাট খুলে সতর্কাবস্থায় রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাত ১০টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর ( স্বাভাবিক বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ব্যারেজ রক্ষায় ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সর্বশেষ রাত ৯টায় পানি ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হয়। ক্রমেই তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জানা যায়, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল গুলো ডুবে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষজন গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাঁধ এবং বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত করেছে। গোকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, ‘তিস্তার পানি কয়েকদিন স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে পানি। পানি থেকে বাঁচতে কিছু পরিবার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। রাতেই বন্যা কবলিত এলাকা গুলো পরিদর্শন করে লোকজনদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। রাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন মোফা জানান, উজানের ঢলের কারনে তিস্তা নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা নদী ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এই ইউনিয়নের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল নিয়ে নিরাপদে সরে গেছে। এতে করে প্রায় ২ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছে। মহিষখোঁচা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধূরী জানান, যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। উজানের ঢল প্রচন্ডভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এবার ভয়ংকর বন্যা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেশকিছু গ্রামের প্রতিটি বাড়ি হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বন্যা কবলিত হয়ে পড়া মানুষজনকে সরিয়ে নিতে কষ্ট পেতে হচ্ছে। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর জানান, বন্যার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে। বন্যার্তদের সহায়তা দেয়ার জন্য শুকনো খাবার মজুত রয়েছে। আমরা যথা সময়ে বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে এসব ত্রান সামগ্রী পৌছে দেয়ার জন্য কাজ করছি।