মনিরামপুরে করোনাভাইরাসে (কােভিড-১৯) আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন তাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন ৩ চিকিৎসক।
এ সমস্ত রোগীর বিষয়ে খবর পাওয়া মাত্রই বিশেষ করে রাতে স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে রোগীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন মনিরামপুরের সন্তান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাত। মনিরামপুরের বাইরে বাড়ি হলেও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ অনুপ কুমার বসু কর্মস্থলে থেকে অধিকাংশ সময় চিকিৎসা দিচ্ছেন। অপরদিকে আর একজন হলেন মণিরামপুরের কৃতিসন্তান ডাঃ মেহেদী হাসান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসক। দুরে থেকেও তিনি রাত-দিন নিজ এলাকাসহ সারাদেশের করোনা রোগীদের টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছেন। অমায়িক ব্যবহার এবং সার্বক্ষনিক ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় এ ৩ চিকিৎসকের অমায়িক ব্যবহার এবং চিকিৎসা সেবা দিয়ে সকলের হৃদয়ে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
জানাযায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছেন মোট ১৪ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষ ডাঃ হাসানুজ্জামান, ডাঃ আল মামুন জুয়েল, ডাঃ আসাদুজ্জামান এবং ডাঃ জসিম উদ্দিনকে ডেপুটেশনে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়েছেন। বাকী ১০ জনের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন কারনে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছেন না। এরই মধ্যে মনিরামপুরে করোনা পরিস্থিতে বেশ অবনতি হয়েছে।
প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুত্যুর সমীকরণটাও প্রায় একই রকম। ফলে চিকিৎসকরা এসব রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে রাতে দুর-দুরান্ত থেকে জরুরী রোগীরা পরিবহনসহ বিভিন্ন সমস্যার কারনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে পারছেননা। সেক্ষেত্রে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন তরুন মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাত।
রাতে কোন রোগীর অবস্থার অবনতি হবার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই তিনি স্বেচ্ছাসেবীকে সাথে নিয়ে রোগীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অক্সিজেনসহ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। মনিরামপুরের বাইরে বাড়ি হলেও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ অনুপ কুমার বসু কর্মস্থলে থেকে অধিকাংশ সময় চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেশবপুরের নিজ বাড়িতে থেকে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার পরও টেলিফোনে তিনি রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।
অপরদিকে মনিরামপুরের সন্তান ডাঃ মেহেদী হাসান। তিনি ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগে কর্মরত। দুরে থেকেও মেহেদী হাসান রাত-দিন নিজ এলাকার করোনা রোগীদের টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে নিয়মিত ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে চলেছেন। তিনি চিকিৎসা দিয়ে এলাকায় ইতোমধ্যে বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।
বিশেষ করে করোনার প্রাদূর্ভাবে যখন সবাই দিশেহারা। তখন ডাঃ মেহেদী ভয়কে উপেক্ষা করে জীবনের তোয়াক্কা না করেই প্রতিসপ্তাহে ঢাকা থেকে নিজ এলাকায় এসে ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। এছাড়া রাতদিন এলাকার রোগীদের টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ্য করার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
প্রতিনিয়ত ডাঃ মেহেদীর ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী (টেলিমেডিসিন) স্থানীয় মেডিকেল অফিসার ডা: মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাতের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় তারা করোনা রোগীদের অক্সিজেনসহ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। চিকিৎসাসেবা নেয়া শিক্ষক নুরুল হক জানান, ডা: মেহেদীর টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে তার মেয়েসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সেবা নিয়েছে। করোনাকালে ডাঃ মেহেদী, ডাঃ রিফাত এবং ডাঃ অনুপ যেভাবে এলাকার রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাতে মনিরামপুরবাসী তাদেরকে সব সময় হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে রাখবে।
অবশ্য ডাঃ মেহেদী হাসান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় এডমিন (প্রশাসন) ক্যাডারসহ ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের চিকিৎসা দিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছেন। তার এই অনবদ্য অবদানের জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস এবং ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনষ্টিটিউট (আইইইবি) এর পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ সংবর্ধনা দিয়েছে। ডাঃ মেহেদী এবং ডাঃ রিফাতের প্রত্যাশা চাকুরির পাশাপশি নিজ এলাকায় দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মণিরামপুর বাসি তাদের সর্বদা সূস্থ্যতার জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছেন।