গত এক যুগ ধরে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজির হাওলা ও কাছিয়াবুনিয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আমলাভাঙা খালের ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতেন গ্রামবাসীরা। ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ওই বাঁশের সাঁকো ছিল গ্রামবাসীদের দুর্ভোগের কারণ।
পুরোনো ওই সাঁকো পারাপারে ছিল ঝুঁকি। সাঁকো পার হতে গিয়ে পা পিছলে বই-খাতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের খালের পানিতে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনারও নজির আছে। এছাড়া সরু বাঁশের সাঁকো পার হওয়া ছিল বয়স্কদের জন্য কষ্টকর। দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহালেও সেখানে কোনো সেতু নির্মাণ হয়নি। তাই নিজেদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছেন দক্ষিণ কাজির হাওলা ও কাছিয়াবুনিয়া গ্রামের মানুষ।নিজেদের উদ্যোগে বানিয়েছেন ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং দুই ফুট প্রস্থের একটি কাঠের সেতু। এতে সময় লেগেছে প্রায় এক মাস।
গ্রামবাসীরা জানান, ২০০৮ সালে আমলাভাঙা খালের ওপর প্রথমে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে গ্রামবাসী। ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় সাঁকোর পাশে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে একই দৈর্ঘ্যর কাঠের সেতু। এতে তাদের ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, গাছের গুঁড়ি পুতে তার ওপরে কাঠের পাটাতন বিছিয়ে বাঁশের রেলিং দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনদিন আগে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ইতোমধ্যে সেতু জনসাধরণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, সেতুর উত্তর পাড়ে দক্ষিণ কাজির হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর দক্ষিণ পাড়ে রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদ, রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, রাঙ্গাবালী হামিদিয়া রশিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজ, কাছিয়াবুনিয়া মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। দক্ষিণ কাজির হাওলা, উত্তর কাজিরহাওলা,
গণ্ডদুলা, নিজ হাওলা, উনিশ নম্বর ও কাছিয়াবুনিয়া গ্রামের অন্তত এক-দেড় হাজার মানুষকে প্রতিদিন আমলাভাঙা খাল পারাপার হতে হয়। তাই স্থায়ী দুর্ভোগ লাঘবে সরকারিভাবে একটি সেতু নির্মাণের দাবি গ্রামবাসীর। কাঠের সেতু নির্মাণ কাজের উদ্যোক্তা রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের প্রভাষক নাজমুল মাসুদ ও দক্ষিণ কাজির হাওলা গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ মোল্লা। তারা প্রতিবেদককে বলেন,
টেকসই একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানালে উপজেলা চেয়ারম্যান আমাদের ১ লাখ ২০ হাজার টাকার একটি অনুদান দিয়েছেন। তাতে আমাদের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। পরে গ্রামবাসীরা মিলে আরও ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা দিলে কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এতে স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির আহম্মেদ বলেন, চলতি অর্থবছরে উপজেলা পরিষদ থেকে তাদের দুই ধাপে ৯০ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্থ যোগান দিয়েছি একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করার জন্য । সেখানে যেন সরকারিভাবে একটি সেতু নির্মাণ হয়,
সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করছি। এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. মিজানুল কবির বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জায়গা পরিদর্শন করে আয়রন ব্রিজ (সেতু) প্রকল্পে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।