December 23, 2024, 3:09 am

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কাঁসা শিল্পের নাম বিশ্বব্যাপী

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : Sunday, September 12, 2021,
  • 118 Time View

বাঙ্গালীর গৃহস্থালী ও সংস্কৃতির সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কাঁসা শিল্পের নাম দেশজুড়ে থাকার পরও উপমহাদেশে এর বিস্তৃতি ছড়িয়ে ছিল। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মোঘল শাসনামলে এদেশে কাঁসা-পিতলের ব্যবহার শুরু হয়।

প্রথমে তারা কাঁসা-পিতল দিয়ে ঢাল-তলোয়ারের প্রচলন শুরু করলে সৌখিন রাজা-বাদশাহরা কাঁসার বাসন- কোসনের ব্যবহার শুরু করে। তখন থেকেই এই শিল্পের ব্যবহার বেড়ে যায়, তৈরি হয় নতুন নতুন কারিগর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কাঁসা শিল্পের নাম ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু কালের আবর্তে কাঁসা পিতরের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং প্লাষ্টিক, মেলামাইন, ষ্টেইনলেস ষ্টিল ও কাঁচের সামগ্রী দামে কম ও সহজলভ্য হওয়ায় এখন কাঁসা-পিতলের সামগ্রী বেচা-কেনা কমে গেলেও বিয়ে, খাৎনা বা নতুন সন্তান জন্ম হলে এর কদর আজও রয়েছে।

কারণ এই সব উপলক্ষে এখনও কাঁসার, বাসন কোসন উপহার হিসেবে দেয়া হয়। তবে এখন মেলামাইন ও কাচের জিনিসপত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কাঁসা-পিতলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কাঁসার কারিগররা দুর্দিনের মধ্যে পড়লেও বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতে জেলায় এখন প্রায় ৩’শ কারিগর সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু পূর্বে প্রায় ১০ হাজার কাঁসার কারিগর ছিল বলে জানা যায়।

কাঁসার জিনিসপত্র তৈরির জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রামকৃষ্টপুর, শংকরবাটী, আজাইপুর ও রাজারামপুর এলাকা ছিল বিখ্যাত। এই কাঁসা শিল্পীরা নিপুন হাতে তৈরি করতেন থালা, বাটি, গ্রাস, কলস, গামলা, বড় হাঁড়ি বা তামাড়ী, চামচ, বালতি, ফুলদানী, কড়াই, হাঁড়িপাতিল, পিতলের ক্রেষ্ট, স্কুলের ঘন্টা, পানদানিসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী।

এছাড়া কাঁসার থালায় ও ক্রেস্টের ওপর নিপুন হাতে তৈরি ঐতিহাসিক সোনামসজিদ, মহানন্দা ব্রীজ ও আম বাগানের মনোরম দৃশ্য সবার নজর কাড়ে।

আজাইপুরের কাঁসার কারিগর আব্দুস সামাদ জানান, এখন জেলায় প্রায় ৩০টি কারখানা থাকলেও তাঁদের কোন পারমিট নেই। পারমিট রয়েছে ২০/২৫জন মহাজনের কাছে।

ফলে তাদের কাছে উচ্চমূল্যে কাঁসা পিতল কিনতে হচ্ছে। রামকৃষ্টপুরের কাঁসার কারিগর ইসলাম জানান, তারা বংশানুক্রমকিভাবে প্রায় ৮৫ বছর ধরে কাঁসার কাজ করে আসলেও পারমিট (কাঁসা বহনের অনুমতিপত্র) পাননি।

পেয়েছেন কাঁসার এক শ্রেণীর মহাজনেরা। একই এলাকার আরেক কাঁসার কারিগর আসলাম জানান, তার দাদা ও পিতা কাঁসার শিল্পের নিপুন কারিগর ছিলেন এবং তিনি শত কষ্টেও বাপ-দাদার এ পেশা ছাড়তে পারেননি।

বটতলাহাটের কাঁসার কারিগর সাদেক জানান, বর্তমানে বাজারে ১৮’শ টাকা কেজি দরে কাঁসার বাসন-কোসন বিক্রি হচ্ছে এবং পুরাতন কাঁসা কেনা হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি দরে। তিনি জানান, একজন কারিগর ২’শ টাকা কেজি দরে বাসন-কোসন তৈরির মজুরি পেয়ে থাকে।

এদিকে মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও ঐতিহ্য ধরে রাখতে আজও জেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে কাঁসার থালা-বাসনের ব্যবহার দেখা যায়।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71