December 24, 2024, 1:46 am

‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে সাকিব-মুস্তাফিজের কার্যকর বোলিংয়ে স্বস্তির জয়।

অনলাইন ডেক্স
  • Update Time : Wednesday, October 20, 2021,
  • 82 Time View

ওমানের বিপক্ষে ২৬ রানের জয়ে খাদের কিনার থেকে ফিরে এসে টিকে থাকল বিশ্বকাপে। ‘সুপার টুয়েলভ’ পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনার রেখাও রাতের আল আমরাত স্টেডিয়ামের ৩২০০ লাক্স আলোর চেয়েও উজ্জ্বল করে রাখল।

অথচ বাজে ফিল্ডিংয়ে ওমানের সঙ্গে কম পাল্লা দেয়নি তাঁরাও। স্বাগতিকদের তিন-তিনটি ক্যাচ ফেলার বিপরীতে বাংলাদেশের ক্যাচ ফেলা হতে পারত স্বপ্নভঙ্গের কারণও। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে যেমন ১৪ রানে থাকা যতিন্দার সিংয়ের সহজ ক্যাচ ফেলেন মাহমুদ নিজেই। ওমানের এই ব্যাটসম্যান যে ম্যাচই বের করে নিচ্ছিলেন

প্রায়। নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেওয়া মুস্তাফিজও পাঁচটি ওয়াইড বল দিয়ে হতাশার বুদবুদও তোলেন। সেই হতাশার বিস্ফোরণও ঘটে, যখন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের বলে কাশ্যপ প্রজাপতির ক্যাচ ফেলেন মুস্তাফিজও।

কিন্তু ওই যে বলা হলো বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচটি ছিল একই সঙ্গে ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনার এবং প্রবলভাবে ফিরে আসারও। তাই মুস্তাফিজও করেন প্রায়শ্চিত্ত। মাহমুদের সৌজন্যে বেঁচে যাওয়া যতিন্দারকে নিয়ে বড় জুটির দিকে ধাবমান ওমানের অধিনায়ক জিশান মাকসুদকে (১২) ফেরান তো এই ‘কাটার মাস্টার’ই। তবে বোলার মুস্তাফিজ নন, ফিল্ডার মুস্তাফিজ। অফস্পিনার মেহেদী হাসানের সোজা বলে সুইপ করেছিলেন জিশান। বলের নাগাল পেতে ডিপ স্কয়ার লেগে কিছুটা দৌড়ে আসা মুস্তাফিজ বল হাতে জমাতেই এতক্ষণের হতাশা ফুঁড়ে জেগে ওঠে আশা।

সেই আশার পালে তীব্র হাওয়ার জোগান দিতে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়ে যান সাকিব আল হাসানও। জিশান গেলেও যতিন্দার ছিলেন। তাঁকে ফেরানোও জরুরি হয়ে পড়েছিল ভীষণ। সাকিবের বলে ক্যাচও উঠল যতিন্দারের (৩৩ বলে ৪০), এই ম্যাচেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ লিটন কুমার দাসও ভুল করলেন না কোনো, ক্যাচ ধরলেন ঠিকঠাক। ১৩ ওভারেই ৯০ রান তুলে ফেলা ওমানেরও ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ার শুরু তখনই। এতক্ষণ অনিশ্চয়তার ঘূর্ণাবর্তে পাক খেতে থাকা বাংলাদেশের সামনে জয়ের নিশ্চয়তাও প্রথম উঁকি দেয় তখনই।

সেটিকে আরো নিশ্চিত করতে ‘জুটি’ গড়ে ফেলেন সাকিব-মুস্তাফিজ। জোড়ায় জোড়ায় আঘাতও হানেন তাঁরা। প্রথমে সাকিব, পরে মুস্তাফিজও। তাই ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের হাসিতে এই দুই বোলারকে সর্বাগ্রেই রাখতে হয়। ৩৬ রানে ৪ শিকার মুস্তাফিজের। ২৮ রানে তিন শিকার ধরে আবারও অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সাকিবও এমন উজ্জ্বল যে ম্যাচসেরা হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়ার বিকল্প ছিলই না। ব্যাটিংয়ে দলের বাজে শুরুর পর ওপেনার নাঈম শেখকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৮০ রান যোগ করে বিপর্যয় সামলানোতেও ছিলেন সাকিব।

তবে এর আগে কিছুক্ষণের জন্য যেন ফিরে এলেন ‘টু ডাব্লিউ’। বিলাল খান আর কলিমউল্লাহরা কার্যকারিতায় হয়ে উঠলেন ওয়াসিম আকরাম-ওয়াকার ইউনিসের দুর্ধর্ষ সেই জুটি। ওমানের এই দুই পেসারের সুইং আর ইয়র্কারে প্রথম ৩ ওভারে রীতিমতো কাঁপল বাংলাদেশ। এই সময় ক্যাচও যেমন পড়ল, তেমনি উইকেটও হারালেন তাঁরা। দুয়ে মিলে বাঁচা-মরার ম্যাচে অবস্থা মোটামুটি ‘গেল গেল’ রব উঠে যাওয়ার মতোই।

যেতে যেতে মাহমুদ উল্লাহর দল আবার ফিরলও। গল্পের শুরুটা নিজেদের পোড়ার হলেও পরের অংশটি প্রতিপক্ষকে পোড়ানোরও। তাই পাল্টা পুড়তে থাকল ওমানও। সেই সঙ্গে সমান তালে আরো দুটো বিষয়ও চলল। একদিকে ভাগ্য বাংলাদেশের ভীষণ সহায় হলো। অন্যদিকে স্বাগতিকরাও বাজে ফিল্ডিংয়ের প্রদর্শনী চালাতে থাকল। নাঈমই যেমন ১৮ ও ২৬ রানে জীবন পেলেন দুইবার। শুরুর নড়বড়ে বাংলাদেশ এই সুযোগে নাঈম আর সাকিবের ব্যাটে ধরে ফেলে হারানো ছন্দও।

সেই ছন্দে দুলতে দুলতে অনেক বড় স্কোরের আশাও জাগে। কিন্তু ম্যাচটি যে বাংলাদেশের জন্য বারবার রং বদলানোর। তাই প্রত্যাশিত রূপ পায় না ইনিংস। আবার ওমানও যেন বাজে ফিল্ডিংয়ের মধ্যেও ঝলক দেখায় কিছু। তাই ২৯ বলে ৬ চারে ৪২ রান করে সাকিব সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট হয়ে যান। ৪৩ বলে ক্যারিয়ারে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ফিফটি করা নাঈমও ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৪ রানের ইনিংস খেলে পা দেন ওমানের ডানহাতি পেসার কলিমউল্লাহর শর্ট বলের ফাঁদে। সেই ফাঁদ ভোগায় পরের ব্যাটসম্যানদের কয়েকজনকেও। রং বদলানোর ম্যাচে বাংলাদেশ ব্যাটিং অর্ডারও এমন বদলে ফেলে যে ২০০৯ সালের পর আবার ৮ নম্বরে নামেন মুশফিকুর রহিম। তেমন কিছু করতে পারেননি অবশ্য। পারেননি শেষের দিকের অন্যরাও। তাই রান যত হওয়ার কথা, হয় না তত।

ওমানও তাই রান তাড়ায় চোখ রাঙানি দিতে থাকে। অন্তত ১২ ওভার পর্যন্ত। এরপর মুস্তাফিজের সেই ক্যাচ এবং যতিন্দারকে ফিরিয়ে সাকিবের উল্লাস। ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার স্বস্তিটাও তখনই প্রথম অনুভব করতে শুরু করে বাংলাদেশ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71