ঝিনাইদহ পৌর এলাকার উদয়পুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে খুন হওয়া তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক লিয়াকত ওরফে কারিশমা হত্যার জট খুলেছে। প্রায় ১৪ মাস পর এই হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধারের দ্বার প্রান্তে পিবিআই। প্রথমে এটিকে আত্মহত্যা বলে অনুমান করা হলেও ময়না তদন্তের রিপোর্টে হত্যার আলামত পায় চিকিৎসকরা।
এই হত্যা মামলাটি প্রথম দফায় পুলিশ ও পরে হাত বদল হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। নিবিড় তদন্ত, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও আলামত দেখে ক্লুলেস এই মামলাটির মোড় ঘুরিয়ে আনে পিবিআই। কারিশমা হত্যার পর ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মাসের ঝিনাইদহ সদর থানায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই মোঃ আয়ুব আলী।
এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও পুলিশ হত্যার মোটিভ উদ্ধার করতে পারছিল না। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় অবশেষে চূড়ান্ত অগ্রগতি সাধন করে ক্লু উদ্ধার করতে সমর্থ হয় ঝিনাইদহ পিবিআই।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, লিয়াকত ওরফে কারিশমা সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের মৃত সুলতান মাস্টারের ছেলে। ৬ ভাই ২ বোনের মধ্যে লিয়াকত ওরফে কারিশমা সবার ছোট। ১৬ বছর আগে সে হিজড়ার দলে নাম লেখায়। ১৩ বছর আগে জনৈক কামাল মন্ডলের নিকট থেকে জমি কিনে পৌর এলাকার উদয়পুর গ্রামে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন কারিশমা। বছর দুয়েক আগে সদর উপজেলার গোয়ালপাড়া বাজারে একটি জমি কিনে একতলা বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। স্থায়ীভাবে গোয়ালপাড়ার বাড়িতে বসবাস করার জন্য উদয়পুর গ্রামের বাড়িটি বিক্রি করে দিতে গোবিন্দপুর গ্রামের কামরুল ইসলামের স্ত্রী কাজলের কাছ থেকে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকাও গ্রহণ করেন কারিশমা। হিজড়াদের সঙ্গে দ্বন্দের জের ধরে কারিশমা হিজড়া মানসিকভাবে চাপে ছিলেন বলে তার বোন শাহানারা জানান।
এরই মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় ৯ সেপ্টেম্বর সকালে উদয়পুরের বাড়ি থেকে লিয়াকত ওরফে কারিশমার মরদেহ ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। থানায় মামলা রেকর্ড হওয়ার পরে প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন পরিদর্শক শেখ আবুল খায়ের। পুলিশ কোন কুল কিনারা করতে না পেরে মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।
পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক একেএম মনিরুজ্জামান মামলার তদন্ত ভার নিয়ে গত ২৭ অক্টোবর সন্দেহভাজন ৬ জনকে গ্রেফতার করেন। পরে তথ্য যাচাই করে ৩ জনকে ছেড়ে দেন এবং বাকী তিনজনকে আদালতে পাঠান। তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের কাছে তাদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে পাঠানো তিন আসামি হলো উদয়পুর বিশ্বাস পাড়ার আব্দুল কুদ্দুস মোল্লার ছেলে মোঃ রাজন মিয়া (৩৫), উদয়পুর গ্রামের শাহ পাড়ার লতাফত শাহ’র ছেলে আনোয়ার হোসেন শাহ (৪০) এবং উদয়পুর বিশ্বাস পাড়ার মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে মিন্টু মিয়া ওরফে লম্বা মিন্টু। ৩ দিনের রিমান্ড শেষে তাদেরকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পিবিআই’র পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান জানান, এটি একটি ক্লুলেস মার্ডার ছিল। কিন্তু পিবিআই মামলার তদন্তে ব্যাপক অগ্রগতি করেছে। এই ঘটনায় ৩ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও পলাতক আসামি রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের ব্যাপারে আমরা বলতে পারছি না। তবে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তাদেরকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে হত্যার পুরো রহস্য জানা যাবে।
নিহত কারিশমার ভাই আয়ুব হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক কিছু নেতা এই মামলায় প্রভাব খাটিয়ে জড়িত আসামিদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তারাই আসামিদের পালিয়ে থাকতে সাহায্য করছে।