December 24, 2024, 2:47 am

সম্পত্তির জন্য বিধবা মাকে জবাই করে হত্যা করলো মেয়ে।

অনলাইন ডেক্স
  • Update Time : Friday, March 4, 2022,
  • 54 Time View

ওয়াজে নেয়ার কথা বলে গভীর জঙ্গলে ভাড়াটে খুনি দিয়ে জবাই করে মাকে হত্যা করলো মেয়ে। দ্রুততম সময়ে মধ্যে এমনই একটি ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন করে শ্রীপুর মডেল থানা পুলিশ। আসামী শেফালী এবং সোহেল রানাকে আটক করলে তাদের স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্ধিতে ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসে। বর্তমানে আসামীরা গাজীপুর কারাগারে রয়েছেন।

শুক্রবার সকালে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন।

নিহত মিনারা শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পুর্ব খন্ডগ্রামে আবু তাহেরের স্ত্রী। প্রধান আসামী শেফালী মিনারা বেগমের দ্বিতীয় মেয়ে।

সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন জানান, মিনারা বেগমের (৬০) স্বামীকে এ গ্রামের কেউ দেখেনি। তার একমাত্র সন্তান শেফালীও (৩৫) তার বাবার কথা স্মরন করতে পারেন না। বহুকাল পূর্বে স্ত্রীকে রেখে অজানায় নিখোজ হয় তাহার স্বামী। মিনারা তার পিতার রেখে যাওয়া ৮ গন্ডা জমিতে ঘর তুলে বহুকাল ধরে একাকী জীবন কাটাচ্ছিলেন। সম্বল কেবল ওই জমিটুকু আর দুটি গরু। একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বামীর সাথে সম্পর্ক অম্লমধুর। স্বামীর সাথে ঝগড়া করে মাঝেমধ্যেই এসে মিনারার একাকী জীবনের সঙ্গী হন। প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্কের কারনে মিনারা ছিলেন সবার পছন্দের। স্বল্প সামর্থ্য সত্ত্বেও কেউ কোন সাহায্য চাইলে মিনারা খালি হাতে ফেরান নি কাউকে। মিনারার নিস্তরঙ্গ জীবন এভাবেই কেটে যাচ্ছিল একরকম করে।
তিনি আরও বলেন, মিনারার একমাত্র মেয়ে শেফালীর বিয়ে হয় প্রায় বিশ বছর পূর্বে। মায়ের অমতে বিয়ে করেন এক পিকআপ ড্রাইভারকে। শেফালীর তিন সন্তান। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকায় দুই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে একসাথে থাকেন। প্রায় আট বছর পূর্বে মিনারা তার সম্পত্তি সংক্রান্ত একটি উইল করেন যেখানে মিনারা জীবদ্দশায় তার সম্পত্তি ভোগ করবেন এবং তার মৃত্যুর পরে ওই সম্পত্তি ভোগ করবে তার একমাত্র মেয়ে শেফালী। এর মধ্যে মিনারার ভাই ঢাকায় একটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে পরলে মিনারা তার পালিত গরু বেচে দিয়ে ভাইয়ের মামলা মোকাবেলায় সাহায্য করতে চান। এতে প্রতিবাদ করে শেফালী। এ নিয়ে মা মেয়ের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি ও ঝগড়া হলে শেফালী মিনারার বাড়ি ছেড়ে চলে যান স্বামীর বাড়িতে। কিন্তু সেখানেও স্বামীর অত্যাচার আর ছেলেদের অবহেলায় শেফালী অসহায় হয়ে পড়েন। সিদ্ধান্ত নেন মাকে হত্যা করে দ্রুত মায়ের উইল করা সম্পত্তি ও গরুগুলো দখল করতে। শেফালী বিশ্বস্ত কাউকে খুজতে থাকেন তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে।

আজমীর হোসেন জানান, শেফালী তার পরিকল্পনা খুলে বলেন এক সময়ের সহকর্মী সোহেল রানা কে। সোহেল এ কাজের জন্য এক লক্ষ টাকা দাবী করেন। শেফালী চল্লিশ হাজার টাকায় চুক্তি করেন ও পনের হাজার অগ্রিম দেন। এরপরে শেফালী চাচার বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মাকে নিয়ে রওনা হন। সঙ্গী হন সোহেল রানা। পথিমধ্যে মিনারাকে স্প্রাইটের সাথে ঘুমের ওষধ মিশিয়ে খাওয়াইয়ে নিয়ে যান নির্জন জঙ্গলে। শেফালী ইট দিয়ে তার মায়ের মাথায় আঘাত করলে তার মা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শেফালী মায়ের বুকের ওপর বসে মাথা চেপে ধরে। সোহেল রানা ছুড়ি চালায় মিনারার গলায়। দিঘীর জলে রক্তমাখা হাত ধুয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন দুইজন। পরের দিন বাড়িতে এসে শেফালী সবাইকে জানান যে মা কুমিল্লা চলে গেছেন এবং সেখানে তার বিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবেই চলে যায় বিশ দিন।

সন্দেহ বাড়তে থাকে। হঠাৎ এই ব্যতিক্রমী নিখোজের সংবাদ আসে পুলিশের কাছে। শুরু হয় তদন্ত। জানা যায় মিনারার করে যাওয়া উইলের কথা। সন্দেহ স্পস্ট হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে আদ্যোপান্ত। গ্রেফতার করা হয় শেফালী ও সোহেল রানাকে। উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত চাকু। আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেন দুজনে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71