দুজনের আলাদা সংসরা থাকলেও পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন লাভলু ও ফরিদা। তবে ফরিদার পরকীয়া প্রকাশ্যে এলে তালাক দেন স্বামী। এরপর প্রেমিক লাভলুর সঙ্গেই নতুন করে ঘর বাঁধেন ফরিদা। কিন্তু বিয়ের সপ্তাহ না যেতেই লাভলুও তাকে তালাক দেন। ছাড়াছাড়ির পরেও নিয়মিত ঘনিষ্ঠ হতেন তারা। তালাকের পর এমন মেলামেশাই হলো লাভলুর কাল। একসময়ে ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রলোভনে লাভলুকে ডেকে এনে হত্যা করেন ফরিদা। ঘটনাটি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বৃষ্ণপুর গ্রামের।
ছয় বছর আগে এ হত্যাকাণ্ড ঘটলেও অবশেষে সেই ফরিদাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার বিষয় ও ঘটনার বর্ণনা দেন ফরিদা। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের নামও প্রকাশ করেন তিনি। তার জবানবন্দি অনুযায়ী ৪০ বছরের আব্দুল গফুর নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বগুড়া পিবিআই’র পুলিশ সুপার (এসপি) আকরামুল হোসেন।
তিনি জানান, লাভলুকে পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ফরিদাকে লাভলু ডিভোর্স দিলেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরেও ফরিদাকে বিভিন্নভাবে জিম্মি করে নিয়মিত ঘনিষ্ঠ হতেন লাভলু। সর্বশেষ ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রলোভনে লাভলুকে ডেকে এনে হত্যা করেন ফরিদা। এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই ফরিদা নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্যান্য জেলায় পলাতক ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে আব্দুল গফুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
৪৫ বছর বয়সী ফরিদা বৃষ্ণপুর গ্রামের ফজর উদ্দিনের মেয়ে। ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গাজীপুরের জয়দেববপুর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আর গ্রেফতার হওয়া আব্দুল গফুর বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বামুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাকে সোমবার রাতে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে, ২০১৬ সালের ১০ জুলাই রাতে লাভলু সরকারকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। বৃষ্ণপুর গ্রামের একটি মেহগনি বাগানে ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রলোভন দিয়ে তাকে ডেকে নেন ফরিদা। পরে সহযোগীদের নিয়ে হাত-পা চেপে ধরে শ্বাসরোধে লাভলুকে হত্যা করেন তিনি। পরদিন সকালে ওই বাগান থেকে লাভলুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একই বছরের ১৩ আগস্ট শিবগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন নিহত লাভলুর স্ত্রী ৩০ বছরের নুর জাহান খাতুন। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআই। নিহত লাভলু বগুড়া সোনাতলা উপজেলার বামুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পেশায় গরু ব্যবসায়ী ছিলেন।