দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) হাজি মো. সেলিম সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। আপিল আবেদনে কারাদণ্ড থেকে খালাস এবং তার জামিন চাওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
এদিকে, হাজি মো. সেলিমকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এনে গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে।
সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ।
রোববার (২২ মে) দুপুর ২টার দিকে ৩ ছেলেকে নিয়ে হাজি সেলিম আদালত প্রাঙ্গণে যান। সেখানে আগে থেকে তার অনুসারীরা অপেক্ষা করছিলেন এবং নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর হাজি সেলিম প্রবেশ করেন আদালত ভবনে। পরে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন হাজি সেলিম। এরপর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাজী মো. সেলিম হাইকোর্টের নির্দেশে রোববার আত্মসমর্পণ করে জামিনের দরখাস্ত দাখিলপূর্বক আপিল দায়েরের শর্তে জামিনের আবেদন করেন। পাশাপাশি কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদার জন্য এবং কারাগারের তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নতমানের হাসপাতালে ‘বেটার ট্রিটমেন্ট’ আদেশের প্রার্থনা করেন।
আদালত জামিন বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ও দুদক পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন। পরে আদালতের আদেশে বলা হয়, দাবি মতে দরখাস্তকারী আসামি একজন সংসদ সদস্য এবং ভালো চরিত্রের অধিকারী। তার সামাজিক মর্যাদা, আসামি যে অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, তার ধরণ ইত্যাদি বিবেচনায় তাকে জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশন-১ দেওয়া কিংবা উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর দুদকের করা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজি সেলিমের সাজা হয়। পরের বছর ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালত তাকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। হাজী সেলিম ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তার সাজা বাতিল করে রায় দেন। দুদক তখন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করলে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
সেই শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি ধারায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখেন এবং অন্য ধারায় ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। ওই বেঞ্চের দুই বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং একেএম জহিরুল হকের সইয়ের পর ৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
হাজী সেলিমের সংসদ সদস্য পদ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান আগেই বলেছেন, সংবিধানের ৬৬(২-এর ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, যদি কেউ নৈতিক স্খলনের দায়ে ২ বছর বা তার বেশি সাজাপ্রাপ্ত হন, তবে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে অযোগ্য হবেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তিনি যেহেতু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তাই এটা তার নৈতিক স্খলন। সে কারণে সাংবিধানিকভাবে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তার সংসদ সদস্য পদ বাদ হয়ে যাবে। তবে বিষয়টি স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই হাইকোর্টের রায় পাওয়ার পর দুদকের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে। ’