জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও অসহায়-দুঃস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা হাইস্কুল মাঠে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন-ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, সঞ্চারনা করেন সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, কোনো এক অদৃশ্য কারণে এই আগস্ট মাসেই বার বার রক্তের কালিমা লেপেছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও শত্রুরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কালজয়ী মহানায়কদের অনেকেরই প্রাণ দিতে হয়েছে কিংবা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। বিশ্বে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের অন্যতম ভারতের মহাত্মা গান্ধী, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, চিলির সালভাদর আলেন্দে, যুক্তরাষ্ট্রের আব্রাহাম লিংকন, মার্টিন লুথার কিংও জন এফ কেনেডি, মিয়ানমারের জেনারেল অং সান ও মিশরের আনোয়ার সাদাতসহ আরও অনেকে। কিন্তু এই সকল হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একাধিক করণে যেটি সবচেয়ে বর্বরোচিত সেটি হচ্ছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ড। এটি শুধু একটা রাজনৈতিক ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড ছিল না, এটি ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে তার পরাধীনতায় ফিরিয়ে নেওয়া এবং নব্য উদ্ভাসিত ও সদ্য প্রকাশিত জাতিসত্তার পরিচয় মুছে ফেলার জন্যই ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। তাই এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্বের বুক থেকে বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ও জাতিসত্তার সমূলে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছিল।
বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই আগস্ট মাসেই বার বার রক্তের কালিমা লেপেছে এই খালেদা জিয়া তার শাসনামলে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা বাংলাদেশে বিএনপির মদদে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন (জেএমবি)। দেশের ৬৩ জেলার প্রেসক্লাব, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ঢাকার ৩৪টিসহ সর্বমোট ৫শ’ বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। খেয়াল করে দেখবেন, তারা প্রেসক্লাব বেছে নিয়েছিল, কারণ তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না; কারণ তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করতে চায়।
বিএনপি সন্ত্রাসের সুবিধা নিতে চেয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের মদদ দিয়েছে। আকস্মিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল ওই দিন। কীভাবে? আমাদের এও মনে আছে, যে বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য আপনারা কোর্টেও বোমা মেরেছিলেন একযোগে। বিচারক সোহেলকে আপনারা বোমা মেরে হত্যা করেছিলেন। কেন বিচারালয়ে সেদিন আপনারা বোমাবাজি করেছিলেন আমরা বুঝি। কারণ জনগণ যেন আদালতে বিচার চেতে যেতে ভয় পায়। তারপরেও আপনারা নিজেদেরকে রাজনৈতিক দল মনে করেন? তাই এটা বার বার প্রমাণিত হয়েছে যে, আপনারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন। গণমানুষের রাজনীতি করেন না।
পরশ বলেন, আপনারা বর্বর রাজনীতি করেন, বাংলা ভাই সৃষ্টির রাজনীতি করেন, বোমা-বাজির রাজনীতি করেন। বাংলাদেশে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত এদেশের মানুষের উপর যে রকম অত্যাচার করেছেন, আওয়ামী লীগের ভোটারদেরকে চিহ্নিত করে আপনারা ঘড়ে ঢুকে পাকিস্তানী কায়দায় হত্যা করেছেন। যাতে এই সকল নির্যাতিত জনগণ বিচার না চেতে পারে সেই জন্যই আপনারা আবার বিচারালয়ে বোমাবাজি করেছেন বিচার প্রাপ্য জনগণকে ভয় দেখানোর জন্য। ভয়-ভীতি দেখিয়ে জনগণকে শাসন করতে চান আপনারা? আপনারা সেদিন দুইজন জজকে হত্যা করে সারা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এবং আইনের শাসন স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ সৃষ্টি হয়েছিল জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এই যে আজকে আমরা কিছু ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আমাদের অসহায় ও দুস্থ ভাই-বোনদের মাঝে এসেছি। এই উপহারগুলো আপনাদের অধিকার। এগুলোকে দান মনে করবেন না। আজকে সারা বিশ্বে বিশ্বমন্দা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস-পত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি হওয়াতে আপনাদের যে কষ্ট হচ্ছে উপলব্ধি করি। তাই আমরা এই শোকের মাস আগস্টের কর্মসূচি হিসেবে এই আয়োজন করেছি। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রেশন কার্ডের মাধ্যমে ৩০ টাকায় আপনাদের চাল দেবার ব্যবস্থা নিচ্ছে। খুব শীঘ্রই ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সৃদৃঢ় নেতৃত্বে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারব ইনশাল্লাহ। আপনারা শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রাখবেন এবং দোয়া করবেন আল্লাহ যেন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দীর্ঘায়ু দান করে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো। কারা সেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল? আজকে আমার মা-বোনদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই-যারা ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে চায় সেই প্রতিষ্ঠাতা খুনি জিয়াউর রহমান ছিলেন ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান রহমান এদেশের মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিলেন। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের হাতে তুলে দিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হাজার হাজার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে এই খুনি জিয়া। ক্যু, গুম-খুনসহ এমন কোন নারকীয় কাজ নেই যা জিয়াউর রহমান করেন নাই। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জুর আলম শাহীন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. এনামুল হক খান, তাজউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিন, মো. জহির উদ্দিন খসরু, আবু মুনির মো. শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল, অ্যাডভোকেট ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক কাজী সারোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. শামছুল আলম অনিক, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুল হাই, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা, উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা প্রমুখ।