December 23, 2024, 4:36 pm

সর্বস্ব হারিয়ে ভিখারীর বেশে মোশারেফ বিশ্বাস।

সঞ্জিব দাস,গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  • Update Time : Saturday, September 17, 2022,
  • 44 Time View

 জীবিকার তাগিদে গভীর সাগরে মাছ শিকার করতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় বৃদ্ধের একমাত্র উপার্জনের জালসহ ফিশিংবোটটি। বৃদ্ধ ও সঙ্গীয় জেলেরা কোন রকমে অন্য ফিশিংবোটে উঠে প্রাণে বেঁচে গেলেও সেসময় উদ্ধার করা যায়নি জাল ও ফিশিংবোট। পরে সাগরে ভাসমান বৃদ্ধের সেই জাল ও ফিশিংবোট চুরি করে নিয়ে যায় অন্য জেলেরা। চিহ্নিত চোরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেও উদ্ধার হয়নি বৃদ্ধের ৩০ লাখ টাকার জাল ও ফিশিংবোট।

 

মামলা ও অভিযোগ করে আদালত ও পুলিশ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দীর্ঘ চার বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও প্রভাবশালী চোরের কাছ থেকে এখনও উদ্ধার হয়নি জাল ও ফিশিংবোটটি। এদিকে সর্বস্ব হারিয়ে বৃদ্ধ নিজেই এখন ভিখারীর বেশে পথে পথে ঘুরছেন। আর কতদিন মামলা চলবে তা তিনি জানেন না। মামলার খরচ বহন করা ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘোরা তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। এতক্ষণ যার কথা বললাম তিনি হলেন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের উত্তর চরবিশ্বাস গ্রামের মৃত আশ্রাফ আলী বিশ্বাসের ছেলে মোশারেফ বিশ্বাস (৬২)। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নিয়ে নিজের তৈরি ফিশিংবোটের সাহায্যে গভীর সাগরে জাল দিয়ে মাছ শিকার করে ভালভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছিলেন তিনি। তার সেই সুখের সংসারে এখন শুধুই অভাব আর অভাব।

 

আর বৃদ্ধের এ অবস্থার জন্য দায়ী সেই চিহ্নিত জাল চোরেরা হল ভোলা জেলার শশীভূষন থানার চর কলমী গ্রামের আকবর পাহলান (৪৫), সূতারহাট থানার চৌকিদারের খাল এলাকার খায়ের মাঝি (৩৫), আলাউদ্দিন মাঝি (৪২), জাহাঙ্গীর মাঝি (৪৫), মন্নান (২৫) এবং ফিশিংবোট চোরেরা হল একই জেলার চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর গ্রামের বশির মোল্লা (৪০) ও চেয়ারম্যান বাজারের সালাউদ্দিন মাঝি (৪২)। মামলা ও অভিযোগসূত্রে জানা যায়, গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের উত্তর চরবিশ্বাস গ্রামের জেলে মোশারেফ বিশ্বাস ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই নিজের তৈরি ‘খানকায়ে জৈনপুরী’ ফিশিংবোট নিয়ে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে রাঙ্গাবালী উপজেলার সন্নিকটে বঙ্গোপসাগরে গেলে ঝড়ের কবলে জালসহ ফিশিংবোটটি তলিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট সেই জাল পাওয়া যায় ভোলা জেলার সূতারহাট থানার বকশীঘাটে আকবর পাহলান, খায়ের মাঝি, আলাউদ্দিন মাঝি, জাহাঙ্গীর মাঝি ও মন্নানের কাছে। তারা জাল ফেরত দিতে অস্বীকার করলে ১৩ আগস্ট মোশারেফ বিশ্বাস রাঙ্গাবালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন এবং ৪ সেপ্টেম্বর গলাচিপা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন, যার নম্বর সিআর- ৬৩৯/২০১৮। মামলাটি চলমান, দীর্ঘ চার বছরেও মেলেনি তার নিষ্পত্তি। ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট ফিশিংবোটটি পাওয়া যায় ভোলা জেলার শশীভূষন থানার পাঁচ কপাট স্লূইসগেট এলাকার ডকইয়ার্ডে বশির মোল্লা ও সালাউদ্দিন মাঝির কাছে।

তারা ফিশিংবোট ফেরত দিতে অস্বীকার করলে একই সালের ৪ সেপ্টেম্বর মোশারেফ বিশ্বাস ওই দুজনের বিরুদ্ধে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে পুলিশ সুপার শশীভূষন থানার ওসিকে তদন্ত সাপেক্ষে সাত দিনের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। কিন্তু চোরেরা প্রভাবশালী হওয়ায় অদ্যাবধি এর বাস্তবসম্মত কোন সুরহা হয়নি। ভুক্তভোগী মোশারেফ বিশ্বাস বলেন, আমার জাল-সাভার দিয়ে ওরা সাগরে মাছ ধরছে। বছরের পর বছর ধরে মামলা চালিয়ে আমি এখন পথের ফকির হয়ে গেছি। চোরের কাছ থেকে কবে পামু আমার জাল-সাভার জানিনা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71