January 6, 2025, 11:29 am

গলাচিপায় বিলুপ্তির পথে দয়াময়ী মন্দির।

সঞ্জিব দাস,গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  • Update Time : Tuesday, September 20, 2022,
  • 47 Time View

 পটুয়াখালীর গলাচিপায় ‘দয়াময়ী’ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয় নবাবী আমলে। প্রায় ২ শো ২২ বছরের ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ী দেবীর মন্দির নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে মন্দিরের সিংহ দরজা সুতাবড়ীয়া নদীগর্ভে চলে গেছে। দয়াময়ী মন্দির নিয়ে রয়েছে অনেক পৌরানিক কাহিনী। জনশ্রুতি রয়েছে, অনেক কাল আগে কোনও এক রাতের আঁধারে মন্দির এলাকায় একটি প্রাচীন বেল গাছের তলার মাটি ফুঁড়ে বের হয় দয়াময়ী দেবীর মূর্তি। ঠিক ওই রাতেই এলাকার জমিদার ভবানী শঙ্কর সেন স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হন দেবী মূর্তির আবির্ভাবস্থলে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য। আবার কারো কারো মতে-স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে জমিদার ভবানী শঙ্কর সেন গ্রামের পার্শ্ববর্তী নদীতে সূর্যস্নান করতে গিয়ে পাথরের তৈরি দয়াময়ী দেবীর মূর্তিটি ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান। ভাসমান ওই মূর্তিটি উদ্ধার করে এনে দয়াময়ী দেবীর নামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দয়াময়ী মন্দির। জানা গেছে, বাংলা ১২০৮সনে গলাচিপার সুতাবাড়িয়া গ্রামের প্রায় তিন একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দিরটি। মন্দিরের পশ্চিম পাশে রয়েছে আলাদা একটি শিব মন্দির। শিব মন্দিরের উপরিভাগ গম্ভুজাকৃতির।

 

এক সময় দয়াময়ী দেবী মন্দিরের প্রত্মতাত্ত্বিক সৌন্দর্য্যে আকৃষ্ট হয়ে দেশ-বিদেশ থেকে অগনিত মানুষ ছুটে আসতেন মন্দির দর্শনে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের পদভারে জমজমাট থাকত সারা গ্রাম। প্রতি বছর মাঘ মাসের ১ তারিখ থেকে একমাসব্যাপী মেলা বসত মন্দির এলাকায়। হাজার হাজার লোক সমবেত হতো মেলায়। কলকাতা থেকে নামী-দামী যাত্রাদলসহ দেশ-বিদেশের সাধু-সন্ন্যাসিরা এসে ভিড় জমাতেন মেলায়। সনাতন ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে দয়াময়ী দেবীর মন্দির এবং দয়াময়ী মেলার বিবরণ রয়েছে। সময়ের ¯্রতে ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ী মেলাটি এখন বছরে মাত্র একদিনের জন্য অনুষ্ঠিত হয় মাঘী সপ্তমীতে। স্থানীয়রা জানান, মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সপ্তমীর দিন হিন্দু পরিবারের অনেক গৃহবধু মন্দির প্রাঙ্গণে এসে শাঁখারীদের কাছ থেকে নতুন শাঁখা ক্রয় করেন। অনেকে আবার বিভিন্ন রোগ-শোকে শিব পূজা এবং কালী পূজা করেন এখানে। বর্তমানে নদীর পাড়ে জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় এ মন্দিরটি দাঁড়িয়ে আছে। মন্দিরের সিংহ দরজা অনেক আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পাঠা বলীর ঘর, কালী মন্দির, শিব মন্দির ও একমাত্র দীঘিটি। কালের বিবর্তণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে এ মন্দিরের সবকিছুই আজ বিলীন হওয়ার পথে।

 

স্থানীয়রা জানান, প্রাচীন নিদর্শন এ মন্দিরটি অমূল্য প্রত্মসম্পদ। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রাচীন ঐতিহ্যমতি দয়াময়ী দেবী মন্দির আজ ধ্বংস্তুপে পরিণত হতে চলেছে সবার চোখের সামনেই। দয়াময়ী দেবী মন্দিরের পুরোহিত বিধান গাঙ্গুলি (৪০) বললেন, ‘প্রতি বছর মাঘের সপ্তমিতে এখানে মেলা বসে। মেলায় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ আসেন। কিন্তু সংস্কারের অভাবে মন্দিরটি নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। এখনই সংস্কার না করা হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো মন্দিরটি বিলীন হয়ে যাবে। গলাচিপার চিকনিকান্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন রিয়াদ বলেন, দয়াময়ী দেবী মন্দির পটুয়াখালী জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। প্রায় ২শ’ ২০ বছরের পুরানো স্থাপত্য ও প্রত্মতত্ত্বিক নিদর্শনটি নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা জরুরী।

 

গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মু. শাহীন শাহ্ বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোমহিউদ্দিন আল হেলাল ( অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ বিষয় মন্ত্রনালয় অবগত করব। ঐতিহ্যবাহী এ মন্দিরটি প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় প্রত্যতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ঠাঁই পেলেও এটি রক্ষণাবেক্ষণের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে বর্তমানে যে সামান্য স্থাপনা শেষ নির্দশন হিসেবে ঠিকে আছে, তাও অচিরেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার প্রহর গুনছে। আর এরমধ্যে দিয়েই ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি গৌরবোজ্জ্বল পর্বের সমাপ্তিকাল ঘটতে চলছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71