January 6, 2025, 11:19 am

হতাশ বেকার যুবক ফেসবুক লাইভে ছিঁড়ে ফেললেন সার্টিফিকেটগুলো।

অনলাইন ডেক্স
  • Update Time : Tuesday, September 20, 2022,
  • 38 Time View

চাকরির বয়সসীমা শেষ হওয়ায় বেশ কিছুদিন থেকে হতাশায় ভুগছিলেন নীলফামারীর যুবক বাদশা মিয়া। ইচ্ছে ছিল, চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবেন, দায়িত্ব নিবেন বাবা মায়ের, ফিরিয়ে আনবেন অভাবের সংসারে সচ্ছলতা। তবে দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টার পরও চাকরি না পাওয়ার হতাশায় এতো দিনের অর্জিত সব একাডেমিক সনদপত্র ছিঁড়ে ফেললেন। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফেসবুক লাইভে এসে তার একাডেমিক সনদপত্রগুলো ছিঁড়ে ফেলেন তিনি।

বাদশা মিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামের বাসিন্দা মহুবার রহমানের ছেলে। পরিবারের ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। তাদের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অসহায় বাবা মহুবার রহমান।

জানা গেছে, পাঙ্গা চৌপতি আব্দুল মজিদ দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০০৭ সালে জিপিএ ৩.৯২ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে দাখিল পাশ করেন এবং ২০০৯ সালে সোনাখুলি মুন্সিপাড়া কামিল মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ৪.০৮ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে আলিম পাশ করেন বাদশা মিয়া। এরপর ২০১৪ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তবে অর্থের অভাবে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি।

বাদশা ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ। কত মানুষ ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে করে খাচ্ছে। আর আমি এত সার্টিফিকেট নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও একটা সরকারি বা বেসরকারি চাকরি জোটাতে পারিনি। সনদপত্র অনুযায়ী চাকরির বয়স শেষ, এখন এগুলো রেখে লাভ কি? বয়স থাকতেই তো চাকরি জোটাতে পারিনি। ’

বাদশা আরও বলেন, ‘আমার বাবা খেয়ে না খেয়ে আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাই-বোনদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। বর্তমান সমাজে সবচেয়ে অসহায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত ছেলেরা। এরা না পারে চাকরি জোটাতে, আবার অর্থের অভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করতে। ’

বাদশার সেই ফেসবুক লাইভে তার পরিচিত অপরিচিত অনেকেই মন্তব্য করেছেন। রবিউল ইসলাম নামে এক যুবক কমেন্ট লিখেছেন, ভাই আপনি তো আমাদেরকে অনেক কিছু বুঝান, ভাল ভাল পরামর্শ দেন। এখন এটা কি করলেন ভাই, মেনে নিতে পারছি না। কষ্ট পাইলাম ভাই। এমন সিদ্ধান্ত আপনার নেওয়া ঠিক হয়নি।

আরেক ফেসবুক বন্ধু  লিখেছেন, বাদশা ভাই আপনি আমার একজন ভালো মানের শুভাকাঙ্ক্ষী। বেশ কবার দেখাও হয়েছিল আপনার সাথে। নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ হতো এক সময়। ভিডিওটা দেখে বুকের ভেতর হাহাকার তৈরি হচ্ছে ভাই। বিশ্বাস করতে পারছি না এমন একটা হৃদয় বিদারক কাজ করে বসবেন।

বাদশার বাবা মহুবার রহমান বলেন, চাকরির বয়সসীমা শেষ হওয়ায় বেশ কিছুদিন থেকে হতাশায় ভুগছিল বাদশা। দিন দিন হতাশা বেড়ে যাওয়ায় সে তার একাডেমিক সার্টিফিকেটগুলো কাউকে না জানিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে।

এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘হতাশা গ্রস্থ হয়ে বাদশা এই কাজটি করেছেন। শুধু চাকরি কেন সরকারী অনেক সুযোগ রয়েছে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। আমি চেষ্টা করবো যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার এবং সেখান থেকে ঋণ নিয়ে কিছু একটা করিয়ে দেওয়ার। ’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71