কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। তিন তলা বিশিষ্ট পাগলা মসজিদে একটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবন। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স’ নামকরণ করা হয়েছে। ৩০ হাজার মুসুল্লি যাতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে সেজন্য ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আধুনিক স্থাপত্য নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
জনশ্রুতি আছে, ঈসা খানের আমলে দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা নামক এক ব্যক্তি নদীর তীরে বসে নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে ওই স্থানেই মসজিদটি নির্মিত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারে মসজিদটি তখন থেকেই ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। অন্য আরেক জনশ্রুতি অনুসারে, তৎকালীন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের ‘পাগলা বিবি’র নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়।
সমাজ কল্যাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়
পাগলা মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতসহ জটিল রোগীদের চিকিৎসায় অর্থ ব্যয় করা হয় বলে জানা গেছে। এর আগে মসজিদের আয় থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য কিশোর গঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনে দেওয়া হয়েছিল।
এবার পাওয়া গেছে সাড়ে ১৫ বস্তা টাকা
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক এই পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক সাধারণত তিন মাস পর পর খোলা হয়। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দানসিন্দুক খোলার সময়ের ব্যবধান বাড়ানো-কমানো হয়েছে। এবার খোলা হয়েছে দুই মাস ২৯ দিন পর। প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ ও কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে মসজিদের দানসিন্দুক খোলা হয়। এবার মোট সাড়ে ১৫ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া কিছু বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া গেছে। এর আগে সর্বশেষ গত ২ জুলাই দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
মনের আশা পূরণ হয়
খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়-এটাই সাধারণের বিশ্বাস। সেজন্য দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন। এছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়।