December 23, 2024, 2:57 am

আলাদা হচ্ছে মেরুদণ্ড জোড়া লাগা শিশু নুহা ও নাবা।

অনলাইন ডেক্স
  • Update Time : Thursday, December 1, 2022,
  • 86 Time View

কুড়িগ্রাম জেলার কাঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও তার স্ত্রী নাসরিনের গর্ভে জন্ম নেয়া মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো শিশু নুহা ও নাবা।  চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে Pygopagus Conjoined twin। তাদের বয়স এখন ৮ মাস ১৩ দিন। যমজ শিশু দুটির মেরুদণ্ড ও স্পাইন জনগতভাবে জোড়া লাগানো।

তাদের মূত্রণালী পৃথক তবে মলদ্বার সংযুক্ত। তারা শব্দ ও স্পর্শে সংবেদনশীল। যকৃত, গলব্লাডার, প্লীহা, অগ্ন্যাশয়, কিডনি এবং ইউরেটার্স স্বাভাবিক রয়েছে। দরিদ্র পিতা-মাতার পক্ষে এ ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচারের ব্যয়ভার বহন সম্ভব নয়। আশার কথা যে, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) শিশু দুটির চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো.  শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সার্বক্ষণিক খবর রাখছেন এবং যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কারোর সহযোগীতা লাগলে তারও ব্যবস্থা হবে।

বিএসএমএমই‘র সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, কুড়িগ্রামের জোড়া লাগা শিশু দুটির চিকিৎসা প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। বেশ কয়েক ধাপে অপারেশন লাগবে। নিউরো সার্জন, ইউরোলজিস্ট, শিশু সার্জন, বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জন, এনেস্থিওলজিস্ট, শিশু পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে।

শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সিটিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মেডিক্যাল বোর্ডে এসে শিশু দুটির কেস স্টাডি দেখে বুঝতে পারলাম, তাদের অপারেশন অত্যন্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। এ অপারেশন বেশ কয়েক ধাপে করতে হবে।

মেডিক্যাল বোর্ডে ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, শিশু দুটির মেরুদণ্ড জোড়া ছাড়ানোর পাশাপাশি ইউরোলজিক্যাল কিছু কাজও করতে হবে যা বেশ জটিল।

বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বলছেন, মেরুদণ্ড জোড়ালাগা শিশুর অস্ত্রোপচারে দেশে এটাই প্রথম। জটিল, কঠিন ও অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। পেডিয়াট্রিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক মেডিসিন, ভাসকুলার সার্জারি, অ্যানেসথেশিয়া, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সহ ১৯ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ মাস আগে তিনি কুড়িগ্রামে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা মেরুদণ্ড জোড়ালাগা এ নবজাতকের বিষয়টি আমাকে জানান। আমি তখন শিশুদের দেখতে যাই এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে বলি। গত ৫ মাস ধরে মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা এ শিশুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগে আমার অধীনেই চিকিৎসাধীন। বয়স কম থাকায় তখনই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। এখন দু’ধাপে অস্ত্রোপচার হবে। সব ঠিক থাকলে এ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করা হবে। এক মাস পর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার হবে। দু’ধাপের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর আরও কয়েকমাস তাদের হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। কেননা মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়ালাগা শিশুর অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল স্পর্শকাতর; তবে আমরা আশাবাদী।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71