আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলন ঘিরে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে ফেলেছেন নেতারা। এ দিন দলের কমিটিতে কারা আসবেন তা নির্ধারিত হবে। বিশেষ করে দলের ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদে কে আসবেন তা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।
জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে ওবায়দুল কাদেরের নাম। যদি সেটাই সত্য হয়, তবে সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক করবেন তিনি। আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কার্যনির্বাহী সংসদ, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বা সভাপতির পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক। দলের বর্তমান সভাপতি পদে শেখ হাসিনাই যে থাকছেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তাকেই ঐক্যের প্রতীক বলে মনে করেন। যে কারণে ১৯৮১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনিই দলীয় সভাপতি।
৯ বার শেখ হাসিনা সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করলেও সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন এসেছে বার বার। গত দুই জাতীয় সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ পদে নির্বাচিত হন। তার আগে ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার আগে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল জলিল। তাদের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সম্মেলনের ভেন্যুর প্রস্তুতি কাজ দেখতে আসেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় দলের জাতীয় সম্মেলন ও পদ-পদবী নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সভাপতি আমাদের অপরিহার্য। যিনি সভাপতি (শেখ হাসিনা) আছেন তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক। কাউন্সিলরদের একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না যে তাকে সমর্থন করবে না। কাজেই এই নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ’
এ সময় ‘এবারের যে সম্মেলন যে কমিটি হবে সেটিতে বড় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম’ বলে জানান এ রাজনিতিবিদ। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে পরবর্তী সম্মেলন নির্বাচনের পর আগামও করতে পারি। তখন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হয়তো হবে। আপাতত আমরা বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের ব্যাপারে ভাবছি না। ’
কাদের দলের যে পদে দায়িত্ব পালন করছেন, সেটিতে ‘পরিবর্তন আসবে না’ তার মূলত আলোচনা হচ্ছে দুই মাস আগে থেকে। আলোচনা খবরের শিরোনামে উঠে আসে গত ২৬ নভেম্বর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম টিউবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর। ওই অনুষ্ঠানে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ‘মন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রমী’ বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এছাড়া ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তার (আওয়ামী লীগ সভাপতির) অনেক কাজ কমে গেছে বলেও জানান তিনি।
নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগের ইতিহাসে তিনিই প্রথম টানা তিনবার সভাপতির পাশের চেয়ারে বসবেন। যদিও সবকিছুই নির্ভর করে আছে দলীয় প্রধানের ওপর। কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় দলের এ গুরুত্বপূর্ণ পদে শেখ হাসিনা অন্য কাউকে আনবেন না, এটা অনুমেয়।
এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার জানা মতে অন্তত ১০ জন প্রার্থী আছে। কাজেই কে হবেন- সেটা নেত্রীর ইচ্ছা। তা ছাড়া অধিবেশনে কাউন্সিলরদের মতামতের ওপরও এর প্রতিফলন ঘটবে। ’
ওবায়দুল কাদের ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। উল্লেখ্য, সম্পাদক পরে দুদিন আগে আব্দুর রহমানের নাম আলোচনায় ছিল।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, কাউন্সিলের প্রতিনিধি নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকেই দিয়ে থাকেন। সামনে নির্বাচন, বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন- সবকিছু মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন শেখ হাসিনা। এখন পর্যন্ত যেটা বোঝা যাচ্ছে, ওবায়দুল কাদেরই সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকছেন।