December 23, 2024, 7:37 am

সংবাদ প্রচারের পর আর খাল সাঁতরে নয়, নৌকায় স্কুলে যাবে শিশুরা

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  • Update Time : Sunday, December 25, 2022,
  • 30 Time View

আর খাল সাঁতরে স্কুলে যেতে হবে না শিশু শিক্ষার্থীদের। শীত কিংবা গ্রীষ্মে ভিজতে হবে না জলে। কোমল হাত থেকে পাতিল ছুঁটে গিয়ে হাবুডুবু অবস্থায়ও পড়তে হবে না তাদের। শঙ্কা নেই বই-খাতা ভেজারও।

এখন থেকে নৌকাতেই স্কুলে আসা-যাওয়া করবে ওরা। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দিয়ারচর ও উত্তর চরমোন্তাজের দক্ষিণপ্রান্ত থেকে পাতিল নিয়ে ভেসে ভেসে বাইলাবুনিয়া খাল পেড়িয়ে মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করা সেই শিশুদের দুর্ভোগ ঘুচেছে। তাদের দুর্ভোগের গল্প নিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর সংবাদ প্রচারের পর বৃহস্পতিবার বিনামূল্যে দুইটি নৌকা উপহার দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা জাগোনারী ও সামাজিক সংগঠন শুভসংঘ।

নৌকা উপহারকালে জাগোনারীর পরিচালক (যোগাযোগ) ডিউক ইবনে আমিন বলেন, ‘ সংবাদটি দেখে শিশু শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে খাল পারাপারের জন্য নৌকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই আমরা। পরে দাতা সংস্থা বোসের সহযোগীতায় আমারা শিশুদেরকে একটি উন্নতমানের প্লাস্টিকের নৌকা উপহার দিয়েছি।’ উপহারের নৌকা পেয়ে আনন্দিত-উচ্ছ্বাসিত শিশু শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্কুল ছুঁটি হলে প্রথম নৌকায় করে বাড়ি ফেরা তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাসরিন বলে, ‘আমাগো আর ভিজতে হইবে না ভাইয়া। এখন থেকে নৌকায়ই স্কুলে যাইতে পারমু।’ চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাহিদুল বলেন, ‘আগে আমাগো (আমাদের) খাল সাতরাইয়া (সাঁতরে) স্কুলে আসতে যেতে হইতো। প্রতিদিন স্কুলে আসতে একবার, যেতে একবার ভিজতে হইতো।

এখন আর আমাগো ভেজা লাগবে না।’
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি খুশি অভিভাবরাও। দিয়ারচর গ্রামের শিক্ষার্থী অভিভাবক রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমার দুই নাতি (নাতনি) ইস্কুলে (স্কুলে) যায়। হাতরাইয়া (সাঁতরে) হাতরাইয়া স্কুলে যাইতে ওগো ভয় করতো। আমরাও ওগোরে স্কুলে পাডাইতে ভয় করতো। এহন আর ভয় নাই। ওরা নৌকায় ইস্কুলে যাইবে।’ মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘একাত্তরকে ধন্যবাদ। খাল পারাপারের জন্য দুইটি নৌকা পাওয়ায় শিশু শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়েছে। পাশাপাশি ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা এখন স্কুলগামী হবে বলে আশা করছি।’

উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বায়েজিদ আহমেদ বলেন, ‘ একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা দিয়েছি। আশা করছি, শিগগরই এই খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ হবে।’ উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুল কবির বলেন, ‘শিশু শিক্ষার্থী এবং জনস্বার্থে ওই খালের ওপর ব্রিজ (সেতু) নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি অবহিত করেছি।’

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন আর খাল সাতরে শিশুদের স্কুলে যেতে হবে না, এটি সত্যি আমাদের জন্য আনন্দের একটি বার্তা। কোমলমতি শিশুরা এখন থেকে নৌকায় স্কুলে আসা-যাওয়া করবে।’ নৌকা উপহারকালে উপস্থিত ছিলেন, জাগোনারীর পরিচালক (যোগাযোগ) ডিউক ইবনে আমিন, মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71