January 3, 2025, 8:00 pm

মায়ের লাশ কাঁধে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে ছেলে।

অনলাইন ডেক্স
  • Update Time : Friday, January 6, 2023,
  • 30 Time View

লাশবাহী গাড়ি করে মৃত মায়ের লাশ হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার খরচ জোগাড় করতে পারেনি ছেলে। বাধ্য হয়ে মায়ের লাশ কাঁধে করে অসহায় বৃদ্ধ বাবাকে সঙ্গে নিয়ে পায়ে হেঁটে সেই লাশ বাড়িতে নিয়ে চলছেন ছেলে। বৃহস্পতিবার ভারতে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় রাস্তা দিয়ে লাশ বহনকারী বাবা-ছেলের এই করুন দৃশ্য দেখে পথ চলতি মানুষ হতবাক।

জানা যায়, শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় লক্ষ্মী রানী দেওয়ান নামে ক্রান্তি নগরডাঙ্গার বাসিন্দা এক নারীকে।

এরপর চিকিৎসারত অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে ৭২ বছর বয়সী ওই নারী মারা যান।

 

কিন্তু সেই লাশ বাড়িতে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুলেন্স চালক প্রথমে ৩ হাজার রুপি দাবি করেন বলে অভিযোগ। যদিও ওই নির্দিষ্ট পথের ভাড়া ১২০০ রুপি। ভাড়া কমানোর জন্য মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার আবেদন জানানো হয় অ্যাম্বুলেন্স চালককে। কিন্তু তারপরেও অ্যাম্বুলেন্স চালক রাজি না হওয়ায় বাধ্য হয়েই সেই লাশ চাদরে মুড়িয়ে কাঁধে তুলে নিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে বাড়ির পথে হাঁটা দেয় ছেলে রামপ্রসাদ দেওয়ান। তাকে সহায়তা করে অসহায় বৃদ্ধ বাবা।

ছেলের কাঁধে লাশের মাথার দিক, আর বাবার কাঁধে লাশের পায়ের দিক। জেলা হাসপাতাল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত প্রত্যন্ত গ্রাম ক্রান্তি নগরডাঙ্গা, ফলে পথ চলতে চলতে মাঝেমধ্যে ক্লান্ত হয়ে লাশ মাটিতে রেখে অবসর নিতেও দেখা যায় তাদের। এমনকি ওই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পক্ষেও জানানো হয় যে তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অ্যাম্বুলেন্স নেই।

বৃহস্পতিবার সকালের দিকে জনবহুল রাস্তায় লাশ বহনকারী বাবা-ছেলের এই দৃশ্য দেখে অনেকেই থমকে দাঁড়ান, গা শিউরে ওঠে এলাকাবাসীর।

রাজ্যের মেডিকেল কলেজগুলোতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও এমন একটি ঘটনায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। কেউ বলছেন হাসপাতালের ভেতরে একটি দালাল চক্র এর জন্য দায়ী। অমানবিক এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এগিয়ে আসে একটি সামাজিক সংগঠন। এরপর তারাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

গ্রীন জলপাইগুড়ি নামে ওই এনজিওর সাধারণ সম্পাদক শংকর দাস জানান, আমরা বাইরের রাজ্যে এই ধরনের দৃশ্য দেখতাম। এখন জলপাইগুড়িতেও দেখা যাচ্ছে যে, লাশ কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে।

তার অভিযোগ, জলপাইগুড়ি অ্যাম্বুলেন্স অ্যাসোসিয়েশন এবং জলপাইগুড়ি স্বাস্থ্য দপ্তরের স্বশাসিত প্রশাসন চালানোর কারণে লাশ কাঁধে করে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন পরিবারের লোকজন। আমরা এই ঘটনার খবর পেয়েই এগিয়ে আসি। এরপর সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আমরা লাশটিকে লাশবাহী গাড়িতে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি।

মৃত নারীর ছেলে রামপ্রসাদ দেওয়ান জানান, মায়ের মৃত্যুর পর অ্যাম্বুলেন্স চালক তিন হাজার রুপি দাবি করেন। কিন্তু এর প্রকৃত ভাড়া ১২০০ রুপি। কিন্তু চালক ভাড়া কম না নেওয়ার কারণে আমরা ঠিক করি আমি আর বাবা মিলে মায়ের লাশ কাঁধে করে নিয়ে আসবো। এরপরই রাস্তায় আমাদের সহায়তার হাত বাড়ায় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাদের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্স চেপে মায়ের লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাজ্যের পৌর বিষয়ক মন্ত্রী ফিরাদ হাকিম জানান, অন্যায় করেছে। মানুষ হিসেবে কেউই এই অমানবিক কাজ করতে পারে না।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71