ইসলাম যে আবেগ বা শোক প্রকাশের নামে কোনো বাড়াবাড়িকে পছন্দ করে না তা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। দেশটির মহররম মাস এলেই এ সত্যটি হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবিধানের ইসলামী দণ্ড-বিধি অধ্যায়ের ৬১৮ ও ৬৩৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী পবিত্র মহররম ও আশুরার সময় কেউ প্রকাশ্যে বা জনসমক্ষে শরীর রক্তাক্ত করে শোক-প্রকাশ করেছে বলে প্রমাণিত হলে ওই ব্যক্তিকে দেশটির আদালত নগদ অর্থ জরিমানা, নির্বাসন, চাবুকের প্রহার এবং কারাদণ্ডও দিতে পারে শাস্তি হিসেবে।
ইসলামের বিধান অনুযায়ী ইবাদতের জন্য পোশাক, শরীর ও স্থান পবিত্র হওয়া জরুরি। কিন্তু রক্ত অপবিত্র হওয়ায় এর স্পর্শে স্থান, দেহ ও পোশাক অপবিত্র হয়ে যায়। তাই ইবাদতের স্বার্থে মসজিদ ও ইমামবাড়ার মত পবিত্র স্থানকে ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষের রক্ত দিয়ে অপবিত্র করা নিষিদ্ধ বলে ইরানের আলেম সমাজ ফতোয়া দিয়ে এসেছেন।
যারা কারবালার শোকাবহ ঘ্টনার জন্য শোক প্রকাশ করতে চান তারা অপাত্রে রক্ত অপচয় না করে রোগীদের জন্য হাসপাতালে রক্ত দান করলে অনেক সাওয়াবের অধিকারী হবেন বলেও ইরানি আলেম সমাজ মনে করেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর ফতোয়াতেও বলা হয়েছে যে, মহররম ও আশুরার শোক পালনের নামে শরীর রক্তাক্ত করা হারাম। এমনকি গোপনে এ কাজ করতেও নিষেধ করেছেন তিনি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, এ ধরনের কাজ শোক-প্রকাশ নয় বরং শোক-প্রকাশের ধ্বংস সাধন। এ ছাড়া তিনি পোশাক খুলে বা খালি-গা হয়ে শোক প্রকাশ করারও বিরোধিতা করেছেন। বিশ্বের কোনো কোনো অঞ্চলে আশুরা ও মহররমের শোক প্রকাশের নামে অনেকেই নানা পন্থায় শরীরকে রক্তাক্ত করেন। আর এ বিষয়টি মহররমের পবিত্রতা ও শোক-প্রকাশকারীদের সম্পর্কে নানা নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করছে অনেকের মধ্যেই।
এ ধরনের তৎপরতার ফলে ইসলামের শত্রুরা এই মহান ধর্ম সম্পর্কে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানোর সুযোগ নিচ্ছে বলে ইরানের শীর্ষস্থানীয় অন্য অনেক আলেমও মনে করেন এবং তাই তারা শোক-প্রকাশের ক্ষেত্রে এসব বাড়াবাড়ি পরিহার করতে মুসলমানদের সতর্ক করে আসছেন।