ধান শুকানোর কোন চলমান বৈরী আবহাওয়া আর আকস্মিক বন্যা উপেক্ষা করে কৃষকের ঘরে আউশ ধান উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করলেও কৃষকের মণে বিরাজ করছে নানান দুঃশ্চিন্তা বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালীর গালাচিপা উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকেরা।
সরজমিনে বৃহস্পতি বার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে চলমান করোনাভাইরাস আর বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে আউশ ধান ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পারকরছেন কৃষাণ কৃষাণিরা। ধানা শুকানোর কোন জায়গায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেছেঁ নিয়েছেন সড়ক পথের পাশে। কষ্টার্জিত ও পরিশ্রমের পরে ফলন ফসল ঘরে আসলেও ন্যায্য মূল্য বা শুকাতে না পারায় কৃষকদের মাঝে দুঃশ্চিতার বাসা বেঁধেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার কৃষক।
গোলখালী ইউনিয়নের শিকিশুহরী এলাকার কৃষক মোঃ মতি সিকদার তিনি দুই একর জমিতে আউশ ধান দিয়ে বিপাকে পরে দিশেহারা, তার মতো কৃষক মোঃ ইব্রাহীম তিন একর, মোঃ হারুন আখন্দ দুই একর, মোঃ মিজান দুই একর, চানঁ মিয়া দুই একর এবং নসু মৃধা সহ তারা জানান, আমাদের আর বাচাঁর উপায় দেখিনা। টানা বৃষ্টি আর বন্যার কারনে আউশ ধান কাঁটা যাচ্ছে না। আবার কেউ কাটঁলেও ধান শুভকানোর মতো তেমন কোন জায়গায়ও নেই, দামও তেমন পাচ্ছি না। বর্তমানে আটশত টাকা মণ ধরে বিক্রি করার চেষ্টা করছি।
এবিষয়ে গোলখালী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার মোঃ এনায়েতুর রহমান জানান, এবছর আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৫’শত হেক্ট। এর মধ্যে চলতি আকস্মিক বন্যার কারনে প্রতি হেক্টরে ৪ টন, এবং মোট ১২.৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষাবাদ হয়েছে।
এদিকে আমখোলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় আউশ ধানের চাষাবাদ হলেও প্রকৃতি দূর্যোগের কারণে তারও ব্যাতিক্রম হয়নি। উপসহকারী কৃষি অফিসার নরোত্তম বিশ্বাস প্রতিবেদককে জানান, ৮’শত ২৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭’শত ৫০ হেক্টর। যার বর্তমানে প্রতি হেক্টরে ৪.৫ টন আউশ ধানের চাষাবাদ হয়েছে। তবে ফসল ভালো হলেও আকস্মিক বন্যা ও ধারাবাহিক বৃষ্টির ফলে অনেক আউশ ধান তলিয়ে গিয়েছে।
গলাচিপা সদর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ১৭’শত হেক্টর জমিতে আউশ ধানের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, প্রতি হেক্টর ৩.৫ টন এবং প্রতি ১ একর জমিতে ১.৮ টন আউশ ধান উৎপাদন হতে পারে। তবে বৈরী আবহাওয়া আর বন্যার কারণে আমাদের ও কৃষকের দুঃশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার মোঃ সাঈদুর রহমান জানান, চলতি আউশ মৌসুমে ৭শত হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয় কিছু এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জটিলতায় প্রায় ২৬ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন হাট বাজারে খোজ খবর নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে আউশ ধানের ৪৮ কেজি হিসেবে মণ প্রতি ৮ থেকে ৯ শত টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। যা কৃষক জনগোষ্ঠীর কিছুটা স্বস্তি হলেও ধান নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রান্তিক সোনালী কৃষক।
গলাচিপা উপজেলা সিনিয়র কৃষি অফিসার এ. আর. এম সাইফুল্লাহ প্রতিবেদকে জানান, একদিকে মহামারী আরেক দিকে আকস্মিক বন্যা দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে উপজেলার সকল ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসাররা নিরালশ ভাবে সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশেই আছেন। এবছর উপজেলায় প্রায় ৭হাজার ৪ শত ৫২ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের চেয়ে বেশী হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড ২ হেক্টর এবং বাকি সব উপসি জাতের। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রকৃতিক দূর্যোগের ফলে হয়তো নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার নিচে আসতে পারে।