সূরা আল কাউসার পবিত্র মক্কায় অবতীর্ণ হয়। আয়াত সংখ্যা ৩। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ৩০ তম পারার ১০৮ তম সূরা -সূরা আল কাউসার, যার অর্থ হচ্ছে প্রভূত কল্যাণ। এ সূরাকে সূরা নাহারও বলা হয়।
বাংলা অর্থসহ সূরা আল কাউসার:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
(আরবি উচ্চারণ)-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
(বাংলা অনুবাদ)-
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
(আরবি উচ্চারণ)-
ইন্নায় আ’ত্বোয়াইনা-কাল কাওছার।
(বাংলা অনুবাদ)-
নিশ্চয় আমি তোমাকে আল-কাউসার দান করেছি।
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
(আরবি উচ্চারণ)-
ফাছোয়াল্লি লিরব্বিকা ওয়ানহার।
(বাংলা অনুবাদ)-
অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং নহর কর।
إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
(আরবি উচ্চারণ)-
ইন্নাশায় নিয়াকা হুওয়াল্ আবতার।
(বাংলা অনুবাদ)-
নিশ্চয় তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই হল নির্বংশ।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের পবিত্র কোরআন বুঝে বুঝে পড়ার এবং সঠিক আমল করার তাফিক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমিন।
ফজিলত:
এই সূরার অনেক ফজিলত রয়েছে। সূরা আল কাউসার পাঠের অন্যতম একটি ফজিলত হচ্ছে এটি পাঠে শত্রুর অনিষ্ট হতে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের রক্ষা করে থাকেন।
সূরা আল কাউসারে আল্লাহর তাওহীদ তথা একত্ববাদের বাণী এসেছে। আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর শরীক না করার কথা পবিত্র কোরআনে বারবার এসেছে। সূরা কাউসারেও এ সম্পর্কিত নির্দেশ এসেছে। সূরা কাউসারের দ্বিতীয় আয়াতে এই নির্দেশ এবং একিসঙ্গে আল্লাহা তায়ালার উদ্দ্যেশ্যে কোরবানি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তৃতীয় আয়াত যেসব কাফের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে নির্বংশ বলে দোষারোপ করত তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। অধিকাংশ রেওয়ায়েত মতে এই আয়াতে,‘আস ইবনে ওয়ায়েল এবং কোনো কোনো রেওয়ায়েত মতে ওকবা এবং কোনো কোনো রেওয়ায়েত মতে, কা’ব ইবনে আশরাফকে বোঝানো হয়েছে।
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদিন মসজিদে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন। হঠাৎ মহানবীর (সা.) মাঝে তন্দ্রা অথবা একধরনের অচেতনতার ভাব দৃশ্যমান হলো। এরপর নবীজি (সা.) হাসিমুখে মস্তক উত্তোলন করলেন।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার হাসির কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘এই মুহূর্তে আমার নিকট একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে’। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহসহ সূরা কাউসার পাঠ করলেন এবং বললেন, ‘তোমরা জান, কাউসার কী?’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন’। তিনি বললেন, ‘এটা জান্নাতের একটি নহর।
আমার পালনকর্তা আমাকে এটা দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অজস্র কল্যাণ আছে এবং এই হাউজে কেয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে যাবে। এর পানি পান করার পাত্র সংখ্যা আকাশের তারকাসম হবে। তখন কতক লোককে ফেরেশতাগণ হাউজ থেকে হটিয়ে দেবে। আমি বলবো, পরওয়ারদেগার, সে তো আমার উম্মত।
আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আপনি জানেন না, আপনার পরে সে কীনতুন মত ও পথ অবলম্বন করেছিল?’ (হাদিসে সহিহ বোখারি, মুসলিম শরিফ, আবু দাউদ, নাসায়ী)।
তৎকালীন আরবে যাদের পুত্র সন্তান মারা যেতো তাদের নির্বংশ বলেন অপবাদ দেয়া হতো। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের পুত্র কাসেম অথবা ইব্রাহিম যখন মারা গেলেন, তখন আরবের কাফেররা নবিজী (সা.)-কে উপহাস করা শুরু করলো নির্বংশ।
আর এই প্রেক্ষাপটে সূরা আল কাউসার অবতীর্ণ হয়। এই সূরায় আল্লাহর পেয়ারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের মর্যাদা ও শান উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব কাফের নবীজি (সা.)-কে নির্বংশ বলে দোষারোপ করত, তাদেরকে নির্বংশ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনে এই সূরার মাধ্যমে।
মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হোসাইন থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তির পুত্রসন্তান মারা যায়, আরবে তাকে ‘আব্তার্’ নির্বংশ বলা হয়। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এর পুত্র কাসেম অথবা ইব্রাহিম যখন শৈশবেই মারা গেলেন, তখন কাফেররা তাঁকে নির্বংশ বলে উপহাস করতে লাগল। ওদের মধ্যে ‘আস ইবনে ওয়ায়েলের’ নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার সামনে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এর কোনো আলোচনা হলে সে বলত: আরে তার কথা বাদ দাও, সে তো কোনো চিন্তারই বিষয় নয়। কারণ, সে নির্বংশ। তার মৃত্যু হয়ে গেলে তার নাম উচ্চারণ করারও কেউ থাকবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা কাউসার অবতীর্ণ হয়। (ইবনে কাসীর, মাযহারী)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কাউসার’ সেই অজস্র কল্যাণ যা আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.)-কে দান করেছেন। কাউসার জান্নাতের একটি প্রস্রবণের নাম। সহিহ হাদিসে বলা হয়েছে যে, ‘এটা একটি নহর যা বেহেশতে নবী (সা.)-কে দান করা হবে।’