নিজস্ব খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ
পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার গাজীনগরে চান মিয়ার বাগান থেকে কাঁঠাল গাছ কাটা ও পরিবহনকে কেন্দ্র করে বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে ৫ জন নিহতের ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। বুধবার রাতে জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের সরকারি বাংলোয় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির প্রধান খাগড়াছড়ির অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মো. রেজাউল করিম।
এ সময় তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মেহেদী হাসান ও সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত কমিটির প্রধান খাগড়াছড়ির অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার রেজাউল করিম বলেন, প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এই তদন্ত প্রতিবেদনে কী আছে তা গণমাধ্যমে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
তবে নাম প্রকাশে অনচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিজিবি সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ভিডিও চিত্র এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনার পেছনের ৫ টি তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে মন্তব্যসহ কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
এরমধ্যে বিজিবি’র পক্ষ থেকে গ্রামবাসীকে জড়িয়ে হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও হত্যার অভিযোগ থাকলেও নিহত গ্রামবাসীরা নিরস্ত্র ছিল বলে জানানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
বিজিবির ওপর গ্রামবাসী ও নিহতদের হামলার অভিযোগটির সত্যতা পায়নি কমিটি। নতুন বিদ্যুৎ লাইনের কাজের জন্য বাড়ির পাশের কাঠাল গাছ কেটে ৫ টুকরো গাছ ট্রাক্টরে(ট্রলি) করে স’মিলে নেয়ার পথে বাধা দিয়েছিল বিজিবি সদস্যরা।
এ সময় বাকবিতন্ডতা হয় নিহত শাহাব মিয়া ও মফিজ মিয়ার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। এতে গ্রামের অন্য কেউ ছিল না।
তদন্ত কমিটির কাছে গত ১০ মার্চ ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক বিজিবি সদস্যের বক্তব্যে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ার কথা স্বীকার করেছে।
নিহত বিজিবি সদস্য মো. শাওন খানের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হয়েছে। ঘটনাস্থলে বিজিবি সদস্যরা গুলি ছোঁড়ার কিছু সময় আগে ধারণ করা কয়েক সেকেন্ডের এক ভিডিও চিত্রে দেখা যায় নিহত বিজিবি সদস্য শাওন খানের কাছে কোন অস্ত্র ছিল না।
ভিডিওতে শাওনকে স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। আর নিহত এক ব্যক্তি বিজিবি সদস্যের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে গুলি চালানোর কথা বিজিবির পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও একজন প্রশিক্ষিত বিজিবি জোয়ান থেকে পঞ্চাশ বয়সী এক ব্যক্তির পক্ষে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গাছ কাটা ও পরিবহনে বিজিবির বাধা দেয়ার কাজ তাদের দায়িত্বে ছিল না বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ঘটনার দিন বিজিবি সদস্যরা যদি পেশাদার ও দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করত তাহলে এতো বড় ঘটনা এড়ানো যেত বলেও মন্তব্য করা হয়।
এদিকে এ বিশাল ঘটনায় এখন পুরো মাটিরাংগাবাসীরই একটি প্রশ্ন, সঠিক বিচার পাবে কি বিধবা পরিবার সহ গ্রামবাসীরা?
প্রসঙ্গত, গত ৩ মার্চ মাটিরাঙ্গার গাজীনগরে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে করে বিজিবির সাথে সংঘর্ষে একই পরিবারের ৩ জন সহ ৫ জন নিহত ও ১ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। এ ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ৬ কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এ ঘটনায় বিজিবি ও নিহতদের পরিবার পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে মাটিরাঙ্গা থানায়।