মরণঘাতি করোনা ভাইরাসের সঙ্গে দীর্ঘ ২২ দিন লড়াইয়ে হেরে গেলেন বর্ষিয়াণ আওয়ামী লীগ নেতা আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন। তিনি আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহির–রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী সেলিনা হোসাইন, ছেলে আসম জাওয়াদ সুজন, মেয়ে ড. শারমীন জাহান শাম্মি ও নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি পটুয়াখালী-৩ গলাচিপা-দশমিনা আসন থেকে চারবার আওয়ামী
লীগ দলীয় এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া, আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা।
তিনি গত ২ ডিসেম্বর প্রথম কোভিড’উনিশ পজিটিভ হন। অবস্থার অবনতি হলে গত ৪
ডিসেম্বর তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে গলাচিপা-দশমিনা আওয়ামী লীগের রাজনীতি অনেকটাই
নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মী অভিভাবকহীন হয়ে
পড়েছে। আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, গলাচিপা উপজেলার চরচন্দ্রাইল গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে আজ
শুক্রবার তার লাশ সমাহিত করা হবে।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের চরচন্দ্রআইল
গ্রামে জন্ম নেয়া আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনের রয়েছে দীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। পাকিস্তান আমলে গলাচিপা মডেল সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পরেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কেন্দ্রীয়
ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হন।
পচাত্তরে জাতির পিতার নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন প্রথম সারির লড়াকু সৈনিক। বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের ১৯৭৫ পরবর্তী কালে যখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, তখন আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন সফলতার সঙ্গে ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সুবাদে তিনি
দেশব্যাপী ছাত্রনেতা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৮১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলে আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ দফতর সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৯১ সালে তিনি প্রথম বারের মতো পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে
আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০১৪ সালে তিনি আরও তিনবার একই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬
পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারে তিনি বস্ত্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি সংসদীয় বিভিন্ন কমিটির সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রƒীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।
এছাড়া, বরিশাল বিভাগীয় আওয়ামী লীগের
অন্যতম সমন্বয়কারী ছিলেন। এমপি ও মন্ত্রী থাকাকালে তিনি এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ছিলেন নিবেদিত। তার উন্নয়নের প্রতীক প্রতীক হিসেবে এলাকায় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
তার মৃত্যুতে গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী
সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।