রেকর্ড বৃদ্ধির পর আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম একটু একটু করে কমছে। দুই মাস ধরে কমছে। বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০২১ সালে সোনার দাম ২ শতাংশ কমবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন বছরে দেশের বাজারেও দাম কমে আসবে। তবে ভ্যাটের চাপ ও আমদানির ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের হস্তক্ষেপ দেশের বাজারকে চাপে ফেলেছে। এই চাপ সমন্বয় করতে পারলে দেশের বাজারকে সহনশীল পর্যায়ে নামানো সম্ভব হবে।
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিকে বিয়ের মৌসুম ধরেন সোনার ব্যবসায়ীরা। গত বছর এই মৌসুমে যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছিল, এখন তার চেয়ে ৪০ শতাংশ কম বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের। তবে কয়েক মাস আগের তুলনায় বেড়েছে। তাঁরা বলছেন, আগে অনেক বিক্রেতা ভ্যাট ছাড়াই সোনা বিক্রি করতেন।
সরকারের রাজস্ব আয়ে টান পড়ায় এখন কঠোর মনিটরিংয়ের মধ্যে এসেছে ভ্যাট আদায়। মার্কেটগুলোতে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি বেড়েছে। বিষয়টি বেচা-বিক্রিতে কিছুটা প্রভাব ফেলছে। তবে দাম কমে এলে ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় সহজ হবে।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) সহসভাপতি ও সানন্দা জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রঞ্জিত ঘোষ বলেন, ‘এখন বিয়ের মৌসুম হওয়ায় বিক্রি আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, বিপরীতে দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমছে।
আগামী বছর আরো কমবে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ দাম বেড়েছিল করোনার কারণে সরবরাহ ঘাটতি ও মজুদপ্রবণতায়। ভ্যাকসিন আসায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ঝামেলা শেষ হওয়ায় সোনার বাজার স্বাভাবিক হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দেশের বাজারেও কমবে। তবে আমদানির ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনের একটি নিয়ম চালু করা হয়েছে। তাই আপাতত আমদানি বন্ধ রয়েছে।’
বিশ্বব্যাংকের পণ্যমূল্য তথ্য মতে, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার গড় দাম ছিল আউন্সপ্রতি এক হাজার ৪৮২ ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৫৮৩ ডলারে। সেপ্টেম্বর নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ গড় দাম আউন্সপ্রতি এক হাজার ৯২২ ডলারে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়ে দেশেও সোনার দাম বাড়ছিল। গত আগস্টে দেশে ভরি ৭৭ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
নভেম্বরের মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ে অনেক অনিশ্চয়তার অবসান হয়। সোনার দামও কমতে থাকে। করোনার ভ্যাকসিন আসায় বাজার আরেকটু স্বাভাবিক হয়।
বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘যেকোনো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মন্দার সময় মূলত সোনার চাহিদা বাড়ে। এ কারণেই চলতি বছরে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই বিনিয়োগকারীরা সোনা কেনায় ঝুঁকতে শুরু করেন। এতে দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। মূলত এই সময়ে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে সোনার মজুদ শুরু হয়।
এসব দেশের বিনিয়োগকারীরা মহামারির মধ্যেও রেকর্ড পরিমাণ দাম পেতে মজুদে জোর দেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ঘিরে সোনার বাজার অস্থির হয়ে উঠেছিল। জো বাইডেন জয়ী হওয়ায় সর্বত্র একটা স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে এসেছে। এর প্রভাবেই কমে আসছে দাম। আমরাও সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে কমাচ্ছি।’ বর্তমানে বিশ্ববাজারে সোনার দাম প্রতি আউন্স এক হাজার ৮৭৫ ডলার।
দেশে সবচেয়ে ভালো মানের সোনার ভরি এখনো ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকা, যা বছরের শুরুতে ছিল ৫৮ হাজার টাকা। ২১ ক্যারেটের সোনা বিক্রি হচ্ছে ৬৯ হাজার ৫১৭ টাকায়। ১৮ ক্যারেটের বিক্রি হচ্ছে ৬০ হাজার ৭৬৯ টাকায়। গয়নার সঙ্গে ক্রেতাকে দিতে হয় ৫ শতাংশ ভ্যাট ও ভরিপ্রতি মজুরি।