আমাদের দেশের মানুষ কোন ওষুধ বেশি সেবন করে? এমন প্রশ্নের উওরে আসে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের নাম। কেও জেনে আবার অনেকেই না জেনেই ফার্মেসি থেকে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ক্রয় করে করছে সেবন। যা আমাদের জীবনে ডেকে নিয়ে আসতে পারে চরম বিপদ।
সর্বশেষ এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ এর জুলাই থেকে ২০২০ এর জুন পর্যন্ত দেশে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।বিনা কারণে দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ রক্তের স্বল্পতা, হাড় ক্ষয় থেকে শুরু করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুও ঘটাতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিক্রি হওয়া ওষুধের অর্ধেকই মানুষ খাচ্ছে অপ্রয়োজনে। বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি। সুস্থ কিংবা অসুস্থ যাই হোক, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে অন্তত চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না রোগীরা। ওষুধ বিক্রেতারা বলছেন, প্রতিদিনের মোট বিক্রি হওয়া ওষুধের অন্তত ২০ শতাংশই গ্যাস্ট্রিকের। শাহবাগের এক ফার্মাসিস্ট বলেন, চিকিৎসক যদি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ নাও দেন। তাহলেও তারা আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যান।
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত সেবন নিয়ে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। স্বল্প আঘাতে হাড় ভেঙে যায়। সুনির্দিষ্ট গবেষণা না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দেশের অন্তত ৭০ থেকে ৮০ ভাগ প্রেসক্রিপশনে গ্যাস্টিকের ওষুধ লিখছেন চিকিৎসকরা। যথার্থ পর্যবেক্ষণ ছাড়া রোগীকে ঢালাওভাবে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ না দিতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান তাদের। অধ্যাপক আতিকুল হক বলেন, যদি গ্যাস্টিকের কোনো উপসর্গ না থাকে তাহলে আমরা গ্যাস্ট্রিকের কোনো ওষুধ দেব না। যদি উপসর্গ থাকে তাহলে পরীক্ষা করে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
ব্যথার ওষুধ খেলেই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে হবে এই ধারণা সবার ক্ষেত্রে সঠিক নয় বলেও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, যার পাকস্থলি ভালো আছে বা আলসার রোগ নেই তারা স্বল্পমেয়াদে অর্থাৎ এক দেড় সপ্তাহ পর্যন্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ছাড়াই ব্যথার ওষুধ খেতে পারবেন।
ওমিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজলসহ প্রায় প্রতিটি ব্র্যান্ডের গ্যাস্ট্রিকের একেকটি ওষুধের খুচরা মূল্য ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। অপ্রয়োজনে এবং অভ্যাসবশত এসব ওষুধ খেয়ে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ শারীরিক ও আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।