কয়েকদিন আগেই নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল মেহেদী হাসান। নতুন বই পেলেও অন্যান্য বই-খাতা কেনার জন্য প্রয়োজন ছিল টাকার। পড়ালেখার খরচ চালানো ও পরিবারকে সহায়তা করতে কাজে যোগ দেয় স্থানীয় একটি পেপার মিলে। সেখানে কাজে যোগ দেয়ার চার দিনের মাথায় সোমবার ভোরে সহকর্মীরা কাগজের টুকরোর ভেতর পায় মেহেদীর মরদেহ।
এতে পড়ালেখা করে পরিবারের অভাব ঘোচানোর স্বপ্ন নিমিষেই টুকরো টুকরো হয়ে গেছে মেহেদীর। মর্মান্তিক মৃত্যুর এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের ভালুকার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের কাশর এলাকার ভূইয়া পেপার মিলে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় অপমৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নে পাড়াগাঁও এলাকার গুচ্ছ গ্রামের সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পে ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করছিলেন। সবার ছোট মেহেদী হাসান (১৬) এ বছর অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। পাড়াগাঁও নবদিগন্ত হাই স্কুলের ছাত্র ছিল মেহেদী। স্কুল থেকে নতুন বই পেয়েছে মেহেদীও। পড়ালেখার খরচ চালানো ও পরিবারকে সহায়তা করতে বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি ২০২১) যোগ দিয়েছিলেন স্থানীয় ভূইয়া পেপার মিলে। কিন্তু সোমবার ভোরে মেহেদীর লাশ পায় সহকর্মীরা। কাগজের টুকরোর ভেতরে মেহেদীর ছিন্নভিন্ন লাশ দেখতে পেয়ে পেপার মিল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে খবর দেয় কর্মীরা।
পুলিশ জানায়, কারখানাটির সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, ভোররাতে ৯ শ্রমিক কারখানায় কাজ করছিলেন। শীতের ভোরে কাজের ফাঁকে কেউ কেউ বিশ্রামও নিচ্ছিলেন। এ সময় সবার অজান্তে পেপার মিলে নতুন কাজে যোগ দেওয়া মেহেদী হাসানও কারখানার মেশিনের ফিতার উপরে রাখা কাগজের বান্ডিলের ভেতরে প্রবেশ করে ঘুমিয়ে পড়ে। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে মেশিনের ফিতা ঘুরতে শুরু করে। ওই অবস্থায় ঘুরতে থাকা কাগজের বান্ডিল মেশিনের ভেতরে ঢুকে যায়। কাগজের বান্ডেলের সাথে মেহেদীও মেশিনে ঢুকে যায়। এতে মেশিনের ভেতরের পাখায় কাটা পড়ে মেহেদীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। দেহ থেকে তার মাথা আলাদা হয়ে যায়।
মেহেদী হাসানের মা হামিদা খাতুন জানান, তার ছেলে পবিত্র কোরআনের ১০ পারা হাফেজ হয়েছে। করোনার কারণে মাদ্রাসা বন্ধ। মাদ্রাসার পাশাপাশি স্কুলেও পড়ালেখা করত তার ছেলে। স্কুল থেকে বাড়িতে বই আনার পর নোট বই কিনে দিতে বলেছিল। নিজের বই কেনা এবং পরিবারকে একটু সহায়তা করতে কাজে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু পেপার মিলে তার ছেলের প্রাণ যাবে জানলে নিজেই কাজ করে ছেলের বইয়ের টাকা যোগান দিতেন।
ভূইয়া পেপাস মিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, ভূইয়া পেপার মিলে চলতি মাসের ৭ তারিখে মেহেদী শ্রমিক হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করেন। তবে তার মৃত্যুর ঘটনায় তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সোমবার বিকেলে কিশোরের লাশ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের শরীর থেকে মস্তক পৃথক হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কাজের ফাঁকে ঘুমিয়ে পড়ায় কাগজের মন্ডে পরে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনায় ভালুকা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।