রিকশায় করে সকালে অফিসে গিয়েছি। ভাড়া দিতে গিয়ে খেয়াল হলো ভাংতি টাকা নেই। রিকশাওয়ালা ভাইকে বললাম একটু অপেক্ষা করেন দেখি আমার কোন সহকর্মীকে পাওয়া যায় কিনা, অন্যথায় বিকাশে ভাড়া দিতে পারি।
মধ্যবয়সী রিকশাওয়ালা ভাই হাসিমুখে বললেন বিকাশে পাঠিয়ে দেন। তিনি মোবাইল বের করে বিকাশের একটা নাম্বার বললেন। আমি সেই নম্বরে টাকা পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলাম টাকা পেয়েছেন কিনা। তিনি বলল নম্বরটা বাসায় আছে। না পেলে তিনি জানাবেন। আরও জানালেন আমাকে তিনি চেনেন। মাঝেমধ্যেই আমি নাকি তার রিক্সায় চড়ি।
আমি হাসি মুখে তাকে বিদায় দিলাম। মনে পড়ল ডেইলি স্টারের গত কালকের নিউজের হেডলাইনটা। ফ্রিডম অ্যাট ইয়োর ফিঙ্গারটিপস।
আসলেই তাই। এই যে গত দুই দশকে এত দ্রুত পৃথিবীর বদল, এর আগে কখনো কী এভাবে বদলেছে? এই আমরাই তো টেলিফোন থেকে মোবাইলের যুগ দেখলাম গত ২০ বছরে। এইতো দুই দশক আগেও সবার হাতে হাতে মোবাইল ছিল অকল্পনীয়।
এরপর যখন দ্রুত সবার হাতে হাতে মোবাইল এলো আমরা তখন মজা করে বলতাম পৃথিবীতে এমন একদিন আসবে যে আমরা সবজিওয়ালাকে মোবাইল ফোনে আসতে বলব। রিকশাকেও। আসলেই দেখেন হচ্ছে ওটাই।
আমার মনে হয় আগামী এক দশকের মধ্যেই টাকার বদলে লেনদেন হবে ক্যাশলেস। আজ ব্যাংক বলতে যা বুঝি এরকম শতশত ব্রাঞ্চ হয়তো থাকবে না। হয়তো এক মোবাইলেই চলে আসবে সব ডিভাইস। হয়তো এর চেয়েও দ্রুত কোন বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। কিন্তু বদলে যাওয়া এই পৃথিবীতে মানবিক মূল্যবোধগুলো কতটা থাকবে সেটা নিয়েই আমার যত ভাবনা।
আচ্ছা আমরা মানবিক থাকব তো? মানবিক সম্পর্কগুলো টিকে থাকবে তো? আমরা কি পরস্পর পরস্পরকে বোঝার চেষ্টা করব? সহকর্মী সহকর্মীকে? স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে? সন্তান কী বাবা-মাকে বুঝবে কিংবা বাবা-মা পুরোপুরি সন্তানকে
আমি চাই এই পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন যতই হোক না কেন মানবিক মূল্যবোধগুলো যেন হারিয়ে না যায়। সততা মানবিকতা এই বোধগুলো যেন টিকে থাকে। মানুষের মানুষে শ্রদ্ধা ভালোবাসা যেন থাকে। অন্যের হাসি-কান্না, মান-অভিমান দুঃখগুলো যেন আমরা বুঝতে পারি। সেখানে যেন আমরা পরশ বোলানোর চেষ্টা করি। আমরা যেন মনে রাখি, মানবিক মূল্যবোধগুলো না থাকলে মানব জীবনই বৃথা! শুভ রাত্রি সবাইকে।