December 25, 2024, 5:04 pm

‘বিসমিল্লাহ’র যত বিস্ময়কর বরকত

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : Sunday, January 31, 2021,
  • 696 Time View

সব ভাল কাজের আগে বিসমিল্লাহ পড়ার নির্দেশ রয়েছে। মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনের একটি বরকতময় বাক্য ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। আল্লাহর দুটি গুণবাচক নাম সংবলিত এই বাক্যটিতে সূরা তাওবা ছাড়া কোরআনের সব সূরার শুরুতে আছে। তা ছাড়া এটি কোরআনের স্বতন্ত্র আয়াত। এটি এমন ফজিলতপূর্ণ আয়াত, যা পাঠ করার মাধ্যমে ওই কাজে বরকত ও পূর্ণতা আসে।

হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন – ‘প্রত্যেক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৪/৩২৯)

তাই কল্যাণ ও পূর্ণতার জন্য মুমিনের প্রতিটি ভালো কাজের প্রারম্ভিক আমল এই বিসমিল্লাহ হওয়া উচিত। মূলত এই আমলের মাধ্যমে মুমিন বান্দা তার কাজের ব্যাপারে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন।

‘বিসমিল্লাহ’র প্রভাব: বিসমিল্লাহ একটি শক্তিশালী আমল। এর মাধ্যমে শয়তানের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। অকল্যাণ ও অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আবু মুলাইহ থেকে বর্ণিত, তিনি একজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন। বলেন, আমি একবার নবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর আরোহীর পেছনে বসা ছিলাম। এমন সময় আরোহী পা ফসকে পড়ে গেল। তখন আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। নবী (সা.) বলেন, ‘শয়তান ধ্বংস হোক এরূপ বলো না, কেননা এতে সে নিজেকে খুব বড় মনে করে এবং বলে আমার নিজ শক্তি দ্বারা এ কাজ করেছি; বরং এরূপ মুহূর্তে বলবে ‘বিসমিল্লাহ’। এতে সে অতি ক্ষুদ্র হয়ে যায় এমনকি মাছি সদৃশ হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৯৭৮২)

খাওয়াদাওয়াসহ যেকোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হলে সেই কাজে শয়তানের অংশীদারি থাকে না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাবারে শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৩৭৬)

অন্য একটি হাদিসে এসেছে ‘শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০১৭)

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে প্রথম ওহি নাজিলের সময়ও এ উত্তম বাক্য পড়ানো হয়েছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জিবরাঈল (আ.) সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে জিবরাঈল (আ.) বলেন, হে মুহাম্মদ! আপনি আশ্রয় চান। মুহাম্মদ (সা.) বলেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। অতঃপর জিবরাঈল (আ.) বলেন, হে নবী! আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।’ (তাফসির ইবনে কাসির : পৃষ্ঠা ২৬৩)

‘বিসমিল্লাহ’র মর্যাদা রক্ষা: দাওয়াতনামা, পোস্টার ও ব্যানার যা নির্ধারিত সময়ের পর কোনো প্রয়োজন হয় না, আবার প্রয়োজন শেষে পথে-ঘাটে ও নর্দমায় পড়ে থাকে, কিন্তু বর্তমানে বরকত লাভের আশায় সেগুলোতেই আমরা বিসমিল্লাহ লিখে এর অমর্যাদা করছি। মনে রাখতে হবে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কোরআনের একটি মর্যাদাপূর্ণ আয়াত। কোরআনের অন্য আয়াতের মতো এর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য। তাই এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আরবি বাংলা কোনোভাবেই লেখা উচিত নয়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩২৩)

চিঠিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখার শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখা সুন্নত। কিন্তু অনেকেই বিসমিল্লাহর পরিবর্তে ৭৮৬ লিখে থাকে। এটা জায়েজ নয়। এতে বিসমিল্লাহর বরকত ও ফজিলত কিছুই পাওয়া যাবে না। এ রীতি পরিহার করা উচিত। কারো কারো ‘বিসমিহি তাআলা’ লেখার অভ্যাস আছে। এতে আল্লাহর নাম স্মরণ করার সওয়াব পাওয়া যাবে, তবে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখার  স্বতন্ত্র সুন্নত আদায় হবে না। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৮/২৪, ফাতাওয়া উছমানি ১/১৬৩)। মোটকথা লিফলেট, পোস্টার বা কোনো ধরনের কাগজের টুকরো, যেগুলো সাধারণত সংরক্ষণ করা হয় না সেসব কাগজে ‘বিসমিল্লাহ’ না লিখে বরং তা আরম্ভ করার সময় শুধু মুখে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করে নিলে এর ফজিলত ও বরকত পাওয়া যাবে। (শরহু মুসলিম নববি : ২/৯৮)

বরকতময় আয়াত ‘বিসমিল্লাহ’র মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি আল্লাহ আমাদের প্রত্যেক ভালো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার তাওফিক দান করুন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71