কুলেন্দু শেখর দাস সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকৌপ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় সুনামগঞ্জের মানুষকে নিরাপদে রাখতে চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এবং জেলা ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করে গত ১৫ মে পর্যন্ত জরুরী প্রয়োজনীয় ঔষধের দোকান ও কাচামালের দোকান ছাড়া শহরের বাকি সকল প্রকার শপিং মহল ও বিপনী বিতানগুলো বন্ধ রাখার উদ্যেগ নেওয়া হয়েছিল।
ঐদিন ১৫ মে চেম্বার ও ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে চেম্বার ভবণে সকলস্তরের ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের প্রার্দূভাব টেকাতে দোকানপাঠ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কিছু কিছু ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না।
শহরের বেশকিছু ব্যবসায়ীরা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অমান্য করে আজ শনিবার থেকে সকাল থেকে সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা মার্কেট,মধ্যবাজার,পশ্চিমবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় মনে করিয়ে দেয় করোনার মতো মহামারীর আগমনের বার্তা সুনামগঞ্জে ব্যাপক আকার ধারন করতে পারে। কিন্তু চেম্বার ও ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কিছু মোনাফালোভী ব্যবসায়ীরা শপিং মহল ও বিপনী বিতান খুলে দিলেও প্রশাসনের কোন নজরদারী কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা না করায় হতাশ ও শংঙ্কিত সমাজের সচেতন মহলের মানুষজনের। এই ঈদকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা উপেক্ষা করে এই সমস্ত দোকানগুলোতে সাধারন ক্রেতা বিক্রেতারা যেমন অনেকেই সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার না করে সামাজিক দূরত্ব বজায় না মেনে শপিং মহল ও বিপনী বিতানগুলোতে প্রবেশ করে একে অপরের শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে গাদাগাদি করে কেনাকাটা করলেও দেখার যেন কেউ নেই। ফলে এই সুনামগঞ্জে করোনার ঝুকিঁ প্রকট আকার ধারন করার সম্ভাবণাটাকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এদিকে পুলিশ প্রশাসনের প্রতিটি সদস্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরে থাকতে দিনরাত কাজ করলেও অনেকেই তা মানছেন না। করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সরকার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করলেও এই শহরের বেশকিছু ব্যবসায়ীরা নির্দেশনা মানলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা তা না মেনে দোকানপাঠ খুলে দিয়েছেন।
সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে গিয়ে বিভিন্ন শপিং মহল ও বিপনী বিতান ঘুরে দেখা যায় অনেক ক্রেতা বিক্রেতারা সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার না করেই প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ও গাদাগাদি করে দাড়িয়ে থেকে কেনাকাটা করছেন। এদিকে হঠাৎ করে সাধারন মানুষজনের চলাচল বৃদ্ধি শহরে যানবাহনের চাপ ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বিষয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনটেইন করেই কেনাবেচা করছি এবং প্রতিজন ক্রেতা বিক্রেতারা সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করেই তা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খুশনুর বলেন সরকার যেহেতু নির্দেশনা দিয়েছেন কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য তাই অনেকেই তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছেন। কিন্তু এই করোনার প্রকৌপ দেশে বৃদ্ধি পাওয়ায় আমি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে সুনামগঞ্জের সকল বড় বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা আগামী ঈদ পর্যন্ত চেম্বার ও ব্যবসায়ীদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে সবাই দোকানপাঠগুলো বন্ধ করে দিবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি খায়রুল হুদা চপল বলেন,আমরা চেম্বারের প্রতিটি সদস্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন সার্বক্ষণিক ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছি এই করোন ভাইরাসের মতো মহামারীর করাল থাবা থেকে সুনামগঞ্জের মানুষকে নিরাপদে রাখতে । আমরা গত ১৫ মে পর্যন্ত সুনামগঞ্জ শহরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে সক্ষম হলেও ঐদিন আবারো সকল ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসন্ন ঈদুল ফিতর পর্যন্ত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে উপনীত হলেও আজ কিছু ব্যবসায়ীরা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়েছেন তা সুনামগঞ্জবাসীর জন্য অশনি সংকেত। এই করোনার প্রার্দূভাব থেকে সবাইকে নিরাপদে থাকতে দ্রæত ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারের প্রনোদনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আরো বলেন,যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা সরকারের নির্দেশনা মানবেন তারাই কেবল সরকারে প্রণোদনা পাবেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান এই মহামারী করোনার প্রকৌপ থেকে বাচঁতে সবাইকে নিরাপদে থাকার আহবান জানিয়ে বলেন,একজন মানুষ নিরাপদে থাকলে তার পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্র নিরাপদে থাকবে। কাজেই সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে সকল ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানগুলো বন্ধ রাখা জরুরী। তিনি বলেন এই জেলার মানুষজনকে সচেতন করে সামাজিক দূরত্ব মেনে নিরাপদে রাখতে পুলিশের প্রতিটি সদস্য দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ এর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্যে জানা সম্ভব হয়নি।
এই সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মানুষের নিরাপত্তা বিধানে প্রশাসন দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা সাধারন মানুষজনের।